Home » হাওর-দ্বীপ-ছিটমহল-দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যাচ্ছে উচ্চগতির ইন্টারনেট

হাওর-দ্বীপ-ছিটমহল-দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যাচ্ছে উচ্চগতির ইন্টারনেট

ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা সবার জন্য নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এরই অংশ হিসেবে দেশের হাওর, দ্বীপ এলাকা, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল, ছিটমহলসহ প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। আর এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে রসদ হিসেবে কাজ করবে মোবাইলফোন অপারেটরদের দেওয়া সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের অর্থ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্পগুলো এখন টেন্ডারের পর্যায়ে রয়েছে।

জানা যায়, সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (এসওএফ) থেকে বরাদ্দ অর্থ দুর্গম, প্রত্যন্ত এলাকা, দ্বীপাঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা ও কানেক্টিভিটি তৈরিতে ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়। এই তহবিলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা হয়েছে ১৪১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দেশের মোবাইলফোন অপারেটররা মোট রাজস্ব আয়ের এক শতাংশ অর্থ এ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে জমা রাখে।

এই তহবিল থেকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ‘দুর্গম এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তি নেটওয়ার্ক স্থাপন (কানেক্টেড বাংলাদেশ)’ প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, টেলিটকের হাওর ও দ্বীপাঞ্চলে উচ্চগতির মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের জন্য গত ২১ জানুয়ারি প্রাথমিকভাবে এই তহবিল থেকে আরও ৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাবিত প্রকল্প ‘স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দ্বীপ এলাকায় নেওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়েও আলোচনা চলছে।

দেশের দুই শতাধিক হাওর, বিল, প্রত্যন্ত এলাকা ও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের প্রায় ৭৭২টি ইউনিয়ন এখনও উচ্চ গড়ির ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এর মধ্যে ২২৬টি ইউনিয়ন একেবারেই দুর্গম এলাকায়। এরমধ্যে ১১১টি ছিটমহলও রয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে এমন সব এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছানোর কথা ভাবছে সরকার। বঙ্গবন্ধু-১-এর মাধ্যমেও ইন্টারনেট পৌঁছানো এবং কানেক্টিভিটি তৈরি করার কাজ চলছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার এসব এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়ে প্রযুক্তি বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ইন্টারনেট পৌঁছালে ওইসব এলাকার শিক্ষার্থী ও তরুণরা জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রোগ্রামিংয়ে এগিয়ে যাবে। দূরের শিক্ষার্থীরা অনলাইন স্কুলে পড়ার সুযোগ পাবে। ডাক্তার দেখাতে জেলা শহর বা ঢাকায় আসতে হবে না।

টেলিমেডিসিনের (দূর চিকিৎসা) মাধ্যমে এলাকায় বসে রোগীরা নামকরা চিকিৎসকদের থেকে চিকিৎসা নিতে পারবেন। দ্বীপ এলাকার জেলে ও অন্য পেশাজীবীরা তাদের পণ্যের সঠিক দাম জানতে ও বিক্রি করার সুযোগ পাবেন।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হলে কর্মসংস্থান বাড়বে। এলাকাগুলোর অর্থনৈতিক জীবনে পরিবর্তন আসবে। ঘরে বসেও যে সেবা পাওয়া যায় সে ধারণা প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে বাঁচবে মানুষের কর্মঘণ্টা। সময়টুকু উৎপাদনশীল কাজের পেছনে ব্যয় করতে পারবে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষেরা।

এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন দ্বীপ এলাকা, হাওর, ছিটমহল, প্রত্যন্ত এলাকা ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছাতে সরকার বদ্ধ পরিকর। এই প্রকল্প নিশ্চিত করা গেলে, শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট নির্ভর শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে। টেলিমেডিসিন (দূরচিকিৎসা) সেবা চালুর মাধ্যমে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর হার কমানো যাবে। জটিল রোগের চিকিৎসা গ্রামে বসেই করা সম্ভব হবে। শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর করে শহর ও গ্রামের শিক্ষার মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য কমানো সম্ভব হবে।’

দুর্গম এলাকায় উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে সার্ক স্যাটেলাইট (সাউথ এশিয়ান স্যাটেলাইট) ব্যবহারের পরিকল্পনার কথাও জানান মন্ত্রী। আর তা সম্ভব হলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কে অন্য কাজে ব্যবহারের কথাও বলেন তিনি। 

সর্বোপরি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হলে আগামী দিনে দেশের প্রতিটি কোনায় ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর জাতি গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *