Main Menu

চার বড় সমস্যায় কৃষি ব্যাংক

  • সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমাধানে করণীয়ও ঠিক করেছে কৃষি ব্যাংক
  • সমস্যা সমাধানে সরকারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে 
  • অনুমোদিত ১৫ হাজার ৪৪২ জনবলের মধ্যে কাজ করছেন ৫৮ দশমিক ৯১ শতাংশ 
  • ৮০ শতাংশের বেশি ঋণ দিতে হয় তহবিল খরচের চেয়েও কমে
  • সুদ ভর্তুকি বাবদ বিকেবির পাওনা ১ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা

রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) নিজের চারটি বড় সমস্যা চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছে জনবল ঘাটতি, কম সুদে ঋণ দিতে বাধ্য হওয়া, মূলধন ঘাটতি এবং সরকারের পক্ষে সেবা দিয়েও তার মূল্য না পাওয়া। ব্যাংকটি বলছে, শুধু সমস্যা চিহ্নিতই করেনি তারা, সমাধানের পথও খুঁজে পেয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে গত মঙ্গলবার বিকেবি এসব সমস্যা ও সমাধানের কথা জানিয়েছে। ব্যাংকটি বলেছে, সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি দরকার এবং এই সুদৃষ্টি ছাড়া ব্যাংকটির একার পক্ষে সমস্যাগুলোর সমাধান কষ্টসাধ্য।

১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে গঠিত বিকেবি বিশেষায়িত ব্যাংক হলেও অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রমও পরিচালনা করে। ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধন ও ৯০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ব্যাংকটির বর্তমানে শাখা রয়েছে ১ হাজার ৩৪টি।

জানতে চাইলে বিকেবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী হোসেন প্রধানিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সমস্যা ও সমাধানের কথা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানিয়েছি। আশা করছি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সেগুলো অনুধাবন করবে।’

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি এখনো তাঁর নজরে পড়েনি। চিঠি এসে থাকলে তিনি গুরুত্ব দিয়েই দেখবেন।

জনবল ঘাটতি

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে বিকেবি জানিয়েছে, সরকার অনুমোদিত ১৫ হাজার ৪৪২ জনবলের মধ্যে ব্যাংকটিতে কাজ করছেন ৯ হাজার ৯৭ জন, যা অনুমোদিত জনবলের ৫৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। জনবলের এই বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে মূলত ১৯৮৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগ না দেওয়ার কারণে।

চিঠিতে বলা হয়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (প্রিন্সিপাল অফিসার বা পিও) থেকে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) পর্যন্ত ব্যাংকটিতে ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ২১৪ জন। এর মধ্যে জিএম পদে ৭, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পদে ৪৩, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) পদে ১৩৫, ঊর্ধ্বতন মুখ্য কর্মকর্তা (এসপিও) পদে ১৮৫ এবং পিও পদে ঘাটতি রয়েছে ৮৪৪ জনের।

সমাধান হিসেবে বিকেবি বলেছে, একসময় পুলের আওতায় সব সরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ডিজিএম থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে জিএম নিয়োগ দেওয়া হতো। এটা আবার চালু করা যেতে পারে। আর পিও ও অফিসারদের নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বিসিএস উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার তালিকা থেকে।

কম সুদে ঋণ

বাজার থেকে প্রতিযোগিতামূলক হারে আমানত সংগ্রহ করে বিকেবি, কিন্তু ঋণ দেয় তহবিল খরচের (কস্ট অব ফান্ড) চেয়েও কমে। এ কথা উল্লেখ করে বিকেবি বলেছে, সরকারের নির্দেশনায় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সুদের হারে বিকেবি ঋণ দিতে বাধ্য হয়। ৮০ শতাংশের বেশি ঋণ দিতে হয় তহবিল খরচের চেয়েও কম সুদে।

তহবিল খরচ বেশি হওয়ারও কারণ তুলে ধরে বিকেবি বলেছে, এই ব্যাংকের ঋণের আকার ছোট, কিন্তু ঋণগ্রহীতা বেশি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঋণ দিতে হয় বলে তদারকির জন্য জনবল লাগে বেশি। ফলে তহবিল খরচ বেড়ে যায়। আর এসব কারণে ব্যাংকের লোকসানি শাখাও বাড়ে। অন্য ব্যাংক ব্যবসায়িক সম্ভাবনা বিবেচনায় শাখা খুললেও বিকেবির ক্ষেত্রে তা হয় প্রত্যন্ত এলাকায় জনগণকে ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়া এবং রাজনৈতিক বিবেচনায়।

এ সমস্যার সমাধান হিসেবে বিকেবি বলেছে, তহবিল খরচের চেয়ে যতটুকু কমে বিকেবি ঋণ দেয়, ততটুকু অর্থ সরকারের পক্ষ থেকে যথাসময়ে ভর্তুকি আকারে পাওয়া গেলে বিকেবির লোকসান কমবে। এ ছাড়া সরকারি তহবিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিকেবিতে চলতি হিসাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

মূলধন ঘাটতি

বিকেবির চিঠিতে বলা হয়, সুদ মওকুফ, সুদ-আসল মওকুফ, লোকসান—এসব কারণে বিকেবির মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। ক্রমপুঞ্জীভূত মূলধন ঘাটতি এখন ৭ হাজার ৩৫ কোটি টাকা।

সরকারি নির্দেশনা মানতে গিয়ে শুধু কম সুদে ঋণ দেওয়ার কারণে সুদ ভর্তুকি বাবদ বিকেবির পাওনা দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৫৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন সময় সরকারি আদেশে যে সুদ মওকুফ করা হয়েছে, তার মধ্যে বাকি পাওনা ৩৯৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এই টাকা পেলেও ব্যাংক কিছুটা মূলধন ঘাটতি কমিয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারবে। বাকি মূলধন ঘাটতি সরকার পূরণ করে দিলে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে ব্যাংকটি ভালো করবে।

সেবা দিয়েও মূল্য না পাওয়া

বিকেবি বলেছে, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অনেক কাজ করতে হয় তাদের। বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত দুস্থ মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি কার্যক্রম করলেও বিনিময়ে ব্যাংক কোনো কিছু পায় না। অথচ এসব কাজে ব্যাংকের জনবল নিয়োজিত থাকে এবং ব্যাংকের অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ বিষয়ে বিকেবির যুক্তি হচ্ছে, অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গেলে আলাদা জনবল ও অর্থ খরচ করতে হতো। যেহেতু বিকেবি কাজটি করে দিচ্ছে, তাই এর বিনিময়ে ‘সেবা মূল্য’ চালুর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.