Main Menu

ব্লু হোয়েল : ‘সুইসাইড চ্যালেঞ্জের’ পেছনের ঘটনা

দি ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ ছিলো একটি অনলাইন ‘সুইসাইড গেম’ যেখানে টিনএজার বা কিশোর কিশোরীদের সামনে পঞ্চাশ দিনের পঞ্চাশটি খেলা দেয়া হতো। আর এ চ্যালেঞ্জই বিশ্বজুড়ে অনেক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রথম টাস্কটি আসলে অনেকটাই নির্দোষ- ‘মধ্যরাতে জেগে উঠুন” বা “একটি ভীতিকর সিনেমা দেখো।’

কিন্তু এরপর থেকে দিন দিন কাজগুলো ক্ষতিকর হয়ে উঠতে থাকে। যেমন ধরুন “আপনার বাহুর ওপর একটি তিমিকে কাটুন”।

আর শেষ চ্যালেঞ্জ?
এই খেলার শেষ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিজেকে খুন করা অর্থাৎ আত্মহত্যা। এই অনলাইন গেমটি রাশিয়া থেকে শুরু হয়েছিলো বলে অভিযোগ পাওয়া যায়, যেটি পরে ছড়িয়ে পড়ে ইউক্রেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে।

তথাকথিত এই ‘সুইসাইড গেইম’ এর সঙ্গে শোনা যায় শত শত মৃত্যুর ঘটনা। কিন্তু অনুসন্ধানে যা বেরিয়ে এসেছে সেটি কিছুটা কৌতূহলোদ্দীপক।

খেলাটি প্রাথমিকভাবে যেভাবে ছিল, মনে হচ্ছে পুরোপুরিভাবে সেভাবে আর থাকেনি।

পেছনের গল্প
ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জের গল্পের সূচনা হয়েছিলো রিনা পালেনকোভার মাধ্যমে।

২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর রাশিয়ার দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের এই কিশোরী একটি সেলফি পোস্ট করেন।

এই ছবিতে তিনি খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়েছিলেন। নাকে মুখে কালো স্কার্ফ পেঁচানো ছিলো। তিনি তার মধ্যমা আঙ্গুল রেখেছিলেন ক্যামেরা বরাবর। মনে হচ্ছিলো এটা শুকনো রক্তে ঢাকা।

ফটোর ক্যাপশন ছিলেন ‘বিদায়’। পরদিন তিনি আত্মহত্যা করেন।

বিষয়টা আলোচনায় উঠে আসে রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

কিছু নির্দিষ্ট গ্রুপে এটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। চ্যাটরুমগুলোতে আলোচনা হয় স্কুল বা বন্ধুদের সাথে নানা ঘটনা নিয়ে কিংবা হতাশা, একাকীত্ব বা আত্মহত্যার মতো কিছু নেতিবাচক বিষয় নিয়েও।

নানা ভীতিকর গল্প বিনিময় হতে শুরু করে।

রিনা পালেনকোভার ঘটনাও সেখানে আলোচিত হতে থাকে এবং কেউ কেউ তার প্রশংসাও করে জীবন এভাবে শেষ করার জন্য।

পাশাপাশি কিছু সত্যি ঘটনার ভিত্তিতে হরর সিনেমার মতো নানা কাহিনীও সেখানে আলোচিত হতে থাকে।

কিন্তু মজার বিষয় হলো কেউই আসলে জানত না যে আসল ঘটনাটি কী, বলছিলেন ড্যারিয়া রাডশেঙ্কো, যিনি রাশিয়ান একাডেমি অফ ন্যাশনাল ইকোনমি ও পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের গবেষক। তিনি কথিত ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জের বিষয়টির দিকে দৃষ্টি রাখছিলেন।

কিছু দিন পরই রিনার গল্পের মধ্যে ঢুকে যেতে থাকে একই ধরনের আরও অনেক গল্প।

২০১৫ সালের ক্রিসমাস ডে’তে বার বছর বয়সী ড্যাভিডোভা আত্মহত্যা করে। এরপর ডায়ানা কুজনেতসোভা। কিন্তু যখন তাদের অনলাইন অ্যাকাউন্ট অভিভাবকরা পরীক্ষা করেন তখন তারা একটি বিষয় আবিষ্কার করেন- তা হলো দুটি মেয়েই একই ধরনের অনলাইন গ্রুপে সংযুক্তি ছিলো।

আর এসব গ্রুপে ছিল আত্মহত্যা নিয়ে রিনা পালেনকোভার ড্রয়িং, পোস্ট আর অসংখ্যবার উল্লেখ করা হয়েছে ব্লু হোয়েল বা নীল তিমির কথা।

কিন্তু কেন ব্লু হোয়েল বা নীল তিমি?
এই গ্রুপগুলোতে কিভাবে নীল তিমি আত্মহত্যার সাথে জড়িয়ে গেল তা নিয়ে রয়েছে অনেক জল্পনা কল্পনা। সাংবাদিক, বিজ্ঞানী কিংবা অন্য অনেকেই নানা ধরণের বিবরণ দিয়েছেন।

কেউ বলেন, এটা রাশিয়ান রক ব্যান্ড লুমেনের একটি গানের লিরিকস থেকে এসেছে।

নীল তিমির একটি নির্দিষ্ট ছবি কিভাবে ছড়ালো তা বলা আসলেই কঠিন। রাতের বেলায় তিমি শহরের ওপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রচারিত ছবির একটি।

২০১৬ সালের মে মাসের দিকে নীল তিমি ও সুইসাইডের বিষয় রাশিয়াজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। নোভায়া গ্যাজেট পত্রিকায় সাংবাদিক গালিনা মুরসালিয়েভা একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেন।

তিনি দেখেন এসব অনলাইন গ্রুপগুলোতে কিছু গেইম আছে ‘ওশান হোয়েলস’ এবং ‘এফ৫৭’ নামে।

এসব খেলায় খেলোয়াড়দের জন্য ৫০দিনের ৫০টি করণীয় দেয়া আছে। আর শেষ দিনে ব্যবহারকারীকে নিজের জীবন কেড়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

নোভায়া গ্যাজেট দাবি করে, ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ১৩০টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে এ খেলা খেলতে গিয়ে।

এরপর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়াতে ১৬ বছর বয়সী একটি মেয়ে মৃত্যুবরণ করে। পরে তার পরিবার জানতে পারে এর পেছনেও সেই নীল তিমি।

বেরিয়ে আসে আত্মহত্যার আরও গল্প- যুক্তরাষ্ট্রে ইসাইয়া গনজালেজ, ভারতের হায়দ্রাবাদে এবং রাশিয়ায় দুটি মেয়ে- জুলিয়া কোন্সটানটিনোভা ও ভেরোনিকা ভলকোভা।

কোন্সটানটিনোভা ইন্সটগ্রাম ব্লু হোয়েলের একটি ছবিও পোস্ট করেছিলেন মৃত্যুর কয়েকদিন আগে।

সন্দেহভাজন
২০১৬ সালের নভেম্বরে ২১ বছর বয়সী ফিলিপ বুদেইকিন টিন এজারদের আত্মহত্যায় প্রলুব্ধ করার অভিযোগে আটক হন।

বুদেইকিনকে মনে হচ্ছিলো দোষ স্বীকার করেছেন। রাশিয়ান মিডিয়াকে তিনি বলেন, “আমি সমাজকে পরিষ্কার করছিলাম। কখনো মনে হয়েছে এটা ভুল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনে হয়েছে আমি ঠিকই করছি।”

মনোবিজ্ঞানের সাবেক এই ছাত্র মিডিয়াকে এমন ধারণা দেন যে তিনি অনেক ডেভেলপড কিছু কৌশল ব্যবহার করেছেন টিন এজারদের আত্মহত্যায় প্রলুব্ধ করতে।

তিনি বলেন তিনি এফ৫৭ নামে ২০১৩ সালে গেমটি তৈরি করেন। যেটি তার নামের প্রথম অক্ষর আর তার ফোন নাম্বারের শেষ দুটি ডিজিট।

২০১৭ সালের মে মাসে তিনি দোষ স্বীকার করলে তার তিন বছরের কারাদণ্ড হয়।

এরপরও নানা গবেষণা হচ্ছে
২০১৫ সালে আত্মহত্যা করা এক কিশোরীর বাবার সাথে কথা বলেছেন এভজেনি বার্গ নামে একজন সাংবাদিক।

মেয়ের মৃত্যুর পর তিনি ও তার স্ত্রী একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন সেভিং চিলড্রেন ফ্রম সাইবার ক্রাইম নামে। তাদের একটি প্রকাশনায় বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে তাদের মেয়ের মৃত্যুর জন্য।

নোভা গ্যাজেট পত্রিকার প্রতিবেদনের জন্য এই পিতা হয়ে উঠেন গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ১৩০ জন এই আত্মহত্যার শিকার হয়েছেন।

এ সংখ্যাটি নোভা গ্যাজেট তার প্রতিবেদনে প্রথম লিখেছিলো। তাই মনে করা হচ্ছে, ওই প্রতিবেদন থেকেই এ সংখ্যাটি ছড়িয়ে পড়ে, যা এখনো অনেকে ব্যবহার করছে।

ব্লু হোয়েল : ফ্যাক্ট নাকি ফিকশন?
রাশিয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির ফোকলোর স্টাডিজের আলেক্সান্দ্রা আরখিপোভা বলছেন, তিনি ও তার এক সহকর্মী যখন এসব অনলাইন গ্রুপগুলোতে ঢোকেন তখন তারা বিস্মিত হওয়ার মতো অনেক কিছু পান।

“যারা গ্রুপগুলো তৈরি করেছে তাদের বয়স ১২ থেকে ১৪ এর মধ্যে”। তারা হয়তো পড়েছে বা শুনেছে এই অনলাইন গেইমটি সম্পর্কে। “এই সবগুলো গ্রুপে প্রধানত তরুণরা খেলাটির জন্য অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু সেই গেইম কখনো শুরু হয়নি”।

তাহলে ফিলিপ বুদেইকিন যে গেইমটি তৈরির কথাই স্বীকার করলো? তার এক বন্ধু অবশ্য বলেছেন এটি সত্যি নয়।

প্রকৃত অর্থে সে শুধু রিনার ঘটনা ও এ সম্পর্কিত নানা কিছু অনলাইন গ্রুপগুলোতে পোস্ট করেছে অনেক ফলোয়ার পাওয়ার আশায়।

তবে বাস্তবতা হলো রাশিয়ার তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বিশ্বের সর্বোচ্চ দেশগুলোর মধ্যে একটি। হয়তো কিছু তরুণ অনলাইন গ্রুপে আত্মহত্যা নিয়ে আলোচনা করেছে। এবং এ গ্রুপগুলোতেই ব্লু হোয়েল মেমেস শেয়ার হয়েছে বেশি।

তবে এটিও সত্যি যে টিনএজারদের আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকানোর তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান নেই।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.