সিলেটে হাত বাড়ালেই মিলছে ‘সাদা সোনা’খ্যাত সাদাপাথর। এতোদিন এই সাদা সোনা বা সাদাপাথরের অবস্থান ছিল কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীতে। কিন্তুলুটেরাদের কল্যানে এখন এই খনিজ সম্পদের ছড়িয়ে পড়েছে গোটা সিলেটে। প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযানের কারণে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রসহ ধলাই নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে লুন্ঠিত পাথর নিয়ে বিপাকে পড়েছেন লুটেরাচক্র। অভিযান এড়াতে কোথাও মাটির নিচে আবার কোথাও বালুচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে পাথর।
আবার কেউ কেউ ক্রাসার মেশিনে আমদানি করা ভাঙাপাথর চাপা দিয়ে রেখেছেন সাদাপাথর। গত কয়েকদিনের অভিযানে কোম্পানীগঞ্জ, সদর, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় চার লাখ ঘনফুট সাদাপাথর জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ ঘনফুট। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ সাদাপাথর। পাথর লুটের ঘটনায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক বাদি হয়ে অজ্ঞাত দেড় হাজারকে আসামী করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ গতকাল অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে।
আরও আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার : সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল পয়েন্টের বিভিন্ন ক্রাসার মিল ও পার্শ্ববর্তী মহালদিক গ্রাম থেকে প্রায় আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। পাথর উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকার মামুনুর রশিদ।গতকাল শনিবার সকাল থেকে সিলেট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়াতের নেতৃত্বে যৌথবাহিনী ধোপাগুলের বিভিন্ন ক্রাসার মিল ও স্টকইয়ার্ডে অভিযান চালিয়ে প্রায় দেড় লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। পরে সদর উপজেলার মহালদিক গ্রামে অভিযান চালায় প্রশাসন। ওই গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি ও রাস্তার পাশে রাতের আঁধারে মজুদ করা আরও প্রায় এক লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। মাটি ও বালুচাপা দিয়ে এসব পাথর লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকার মামুনুর রশিদ জানান, ধোপাগুল পয়েন্ট ও মহালদিক গ্রামসহ চারটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রায় আড়াইলাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। জব্দকৃত পাথর ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র ও ধলাই নদীর বিভিন্ন স্থানে ফেলা হবে। এর আগে গত শুক্রবার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ১ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছিল।
এছাড়া গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে লুকিয়ে রাখা আড়াই হাজার ঘনফুট সাদাপাথর জব্দ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল শনিবার গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারীর নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। এসময় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন অভিযানে সহায়তা করে।
আসামী দেড় হাজার, স্বাক্ষী গণমাধ্যমের সংবাদ : সিলেটের ভোলাগঞ্জ থেকে সাদাপাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ারুল হাবীব বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা দেড় হাজারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। খনি ও খনিজসম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২-এর ধারা ৪ (২) (ঞ) এবং খনি ও খনিজসম্পদ বিধিমালা, ২০১২-এর বিধি ৯৩ (১) লঙ্ঘিত ধারায় এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, ‘কিছু দুস্কৃতিকারী গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী সময়ে গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধ ও অননুমোদিতভাবে কোটি কোটি টাকার পাথর লুটপাট করেছে মর্মে বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত রয়েছেন, তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে মামলায় স্বাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাদাপাথর লুটের ঘটনায় গ্রেফতার ৫ : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ থেকে সাদাপাথর লুট ও চুরির ঘটনায় আরও ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬ জনে। গতকাল শনিবার সকালে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে কোম্পানীগঞ্জ থানাপুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- কোম্পানীগঞ্জের কালাইরাগ গ্রামের মোহাম্মদ কামাল মিয়া ওরফে পিচ্চি কামাল, একই গ্রামের মো. আবু সাঈদ, নাজিরেরগাঁও এলাকার মো. আবুল কালাম এবং লাছুখালের ইমান আলী ও একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম। তাদেরকে সাদাপাথর লুটের ঘটনায় খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর আগে কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা সরাসরি পাথর লুটপাটে জড়িত। তাঁদের নেতৃত্বে ধলাই নদের পূর্বপাড়ের কালাইরাগ ও কলাবাড়ি এলাকায় নৌকাযোগে পাথর লুটের ঘটনা ঘটে।
জেলা প্রশাসনের বক্তব্য : সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ জানান, গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটি ও বালু চাপা দিয়ে লুকিয়ে রাখা প্রায় আড়াই লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত পাথরগুলো সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে প্রতিস্থাপন করা হবে। একই সাথে পাথর চুরির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও লুন্ঠিত পাথর উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
প্রতিনিধি