রাত সাড়ে আটটা। গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা তখনো জনাকীর্ণ। ফুটপাতজুড়ে ব্যস্ততা, দোকানে ভিড়, চায়ের কাপে ঝড়। ঠিক তখনই ঘটে গেলো এক নির্মম ঘটনা, একজন সাহসী মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করলো দুর্বৃত্তরা। তিনি সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন।
জীবনের শেষ কয়েক ঘণ্টা যেন তার সাহসিকতার প্রমাণপত্র হয়ে রইল। বিকেলে তিনি ফেসবুকে লাইভে এসে দেখিয়েছিলেন চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কীভাবে ফুটপাতজুড়ে চলছে চাঁদাবাজি। বলেছিলেন, ‘এই শহরে সাধারণ মানুষের হাঁটার জায়গাটুকুও কেড়ে নিচ্ছে কিছু সুবিধাভোগী।’
কিন্তু কে জানতো, সত্য বলার এই মূল্য তাকে সেই রাতেই দিতে হবে? ঘটনার সময় তুহিন দৌড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ঈদগাঁ মার্কেটের এক ছোট চায়ের দোকানে। দোকানদার খায়রুল ইসলাম কাঁপা কণ্ঠে বলেন, ‘তুহিন ভাই আমার দোকানে ঢুকে বলল ‘ভাই, বাঁচান।’ এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তিনজন লোক আমার দোকানের মধ্যে ঢুকে এলো। তারপর… তারা তাকে কুপাতে থাকে, বারবার। আমি বাধা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাইরেও দুজন রামদা হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। হুমকি দিল, আমাকে মেরে ফেলবে।’ চারপাশে মানুষ ছিল। কেউ এগিয়ে আসেনি। তুহিন তখন নিঃসঙ্গ।
সত্যের পাশে দাঁড়ানো মানুষগুলো কখনো কখনো একাই দাঁড়িয়ে থাকে। এবং একাই পড়ে যায় রক্তাক্ত মাটিতে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের সন্তান তুহিন কাজ করতেন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজে গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে। কিন্তু তার কাজ কেবল রিপোর্ট করা ছিল না, ছিল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়া।
সেই চিরচেনা রাস্তা, সেই ড্রেন সংস্কারের অভাব, সেই যানজটে হাঁসফাঁস করা শহর, সবচেয়ে বেশি পীড়িত হতেন তুহিন নিজেই।
তার ফেসবুক প্রোফাইলে পাওয়া গেছে এর প্রমাণ। দিন কয়েক আগে লিখেছিলেন, ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য, গাজীপুর চৌরাস্তা।’
এ শহরের বিশৃঙ্খলা, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য, সবকিছু নিয়েই ছিল তার সরব অবস্থান।
আজ সেই মানুষটিই আর নেই। ফুটপাত নিয়ে লাইভ করেছিল সে বিকেলে, আর রাতে রক্তাক্ত ফুটপাতেই নিঃশেষ হয়ে গেল তার জীবন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. রবিউল হাসান বলেছেন, ‘আমরা কিছু ভিডিও ও ক্লু পেয়েছি। দ্রুত অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা চলছে। সাংবাদিককে এভাবে কুপিয়ে হত্যা খুবই দুঃখজনক।’
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিন খান জানিয়েছেন, নিহতের মরদেহ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বার্তা বিভাগ প্রধান