যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০০ ছাড়িয়েছে। সোমবার (৭ জুলাই) এ তথ্য জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছেন, এখনও আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। বিপর্যয়ের চার দিন পরেও নিখোঁজদের খোঁজে উদ্ধারকারী দলগুলো কাদামাটি জমা নদীর পাড় ঘেঁষে তল্লাশি চালাচ্ছে, যদিও নতুন করে কাউকে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। এর মধ্যেই আরও বৃষ্টি ও বজ্রঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
‘ক্যাম্প মিস্টিক’ নামে কিশোরীদের গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প জানিয়েছে, তাদের অন্তত ২৭ শিক্ষার্থী ও কর্মী মারা গেছেন। আরও ১০ জন শিক্ষার্থী ও এক জন ক্যাম্প কাউন্সেলর এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
শুধু কের কাউন্টিতেই অন্তত ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ২৮ জন শিশু রয়েছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের ছুটির দিনে এই কাউন্টির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গুয়াদালুপে নদীর পানি ভয়াবহভাবে বেড়ে গিয়ে এ বন্যা হয়।
কাউন্টি শেরিফের দপ্তর জানায়, নিহতদের মধ্যে ২২ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ১০ জন শিশুর পরিচয় এখনও শনাক্ত করা যায়নি।
আবহাওয়াবিদেরা আরও বন্যা হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়েছে।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী শুক্রবার টেক্সাস সফর করার পরিকল্পনা করছেন। আবহাওয়া সংস্থার বাজেট কাটছাঁটের কারণে সতর্কতা ব্যবস্থা দুর্বল হয়েছে বলে সমালোচকেরা যে অভিযোগ তুলেছেন, সেটির কঠোর সমালোচনা করেছে হোয়াইট হাউজ।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সোমবার এক ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্টকে দোষারোপ করার প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, ‘এটি ছিল ঈশ্বরের কাজ। বন্যা কখন আঘাত হানবে তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, কিন্তু আমরা আগেভাগেই সতর্কতা দিয়েছিলাম এবং জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে।’
রবিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে দায় এড়িয়ে বলেন, ‘এটা বাইডেনের প্রশাসনের গাফিলতি।’ অবশ্য পরে তিনি নিজেই বলেন, ‘আমি আসলে বাইডেনকে এর জন্য দোষ দিচ্ছি না। এটা এক শতাব্দীর দুর্যোগ।’
টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখন কোনও রাজনৈতিক দোষারোপের সময় নয়।
স্থানীয় এক মানবাধিকারকর্মী নিকোল উইলসন কের কাউন্টিতে বন্যা সতর্কতা সাইরেন বসানোর দাবিতে একটি অনলাইন পিটিশন চালু করেছেন। অন্য অনেক কাউন্টিতে এরকম সিস্টেম থাকলেও, কের কাউন্টিতে এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিল, কিন্তু কখনোই অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি।
টেক্সাসের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক সোমবার স্বীকার করেন, এই সাইরেন ব্যবস্থা থাকলে কিছু প্রাণ হয়তো রক্ষা পেত।
এদিকে ব্রিটেনের রাজা চার্লস তৃতীয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি চিঠি লিখে এই ভয়াবহ বন্যায় তার ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন।
বার্তা বিভাগ প্রধান