১৯৯৯ সালে সিলেট নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকায় ১৪ শতক জমি ক্রয় করেন মো. আলম বেগ। এরপর ২০০৪ সালে সেই জায়গার মধ্যে ৯ শতক জমির উপর ৫ তলা একটি ভবন নির্মাণ করেন। ৫ ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী হওয়ায় এক পর্যায়ে আলম বেগও সস্ত্রীক যুক্তরাজ্যে চলে যান।
২০১৮ সালে তাঁর এই বাড়িটি দখলে নেন যুবলীগ নেতা শামীম ও ছাত্রলীগ নেতা তুষার। অনেক চেষ্টা করেও বাড়িটি দখলমুক্ত করতে পারেননি। নিজের উপার্জিত অর্থে কেনা বাড়িটি বেদখলে যাওয়ার কষ্ট নিয়ে ২০২২ সালে মারা যান আলম বেগ ও তার স্ত্রী।
গত বছর জুলাই বিপ্লবের পর আলম বেগের বড় ছেলে দেশে জানতে পারেন যুবলীগ নেতা শামীম ও ছাত্রলীগ নেতা তুষারের কাছ থেকে বাড়িটি দখলে নিয়েছেন ছাত্রদল নেতা এস এম ফাহিম। এসময় মালিকানার বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। পরে আলম বেগের ছেলে সোহেল বেগ আইনের আশ্রয় নেন। অবশেষে পুলিশের সহযোগীতায় সম্প্রতি বাড়িটি দখল মুক্ত হয়।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে বাড়িটি দখল মুক্ত করায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা সভার আয়োজন করেন বাড়ির মালিক সোহেল বেগের পরিবারের সদস্যরা।
বাড়ির মালিক ও তার স্বজন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালে শামীমাবাদ এলাকার ৫নম্বর রোডের ২১৫ নম্বর বাসাটি বাসাটি দখলে নেন যুবলীগ নেতা শামীম খান ও ছাত্রলীগ নেতা তুষার আহমদ। দখলে নেওয়ার পর বাসাটির নামফলক মাতৃমহল পাল্টে হোয়াইট হাউজ লিখেন। একইসঙ্গে হোল্ডিং নম্বরটিও পরিবর্তন করে ভাড়াটে তুলেন বাসাটিতে। বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করেও বাসাটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
২০২৪ সালের জুলাই অভ্যূত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যুবলীগ নেতা শামীম খান ও ছাত্রলীগ নেতা তুষার আহমদ পালিয়ে গেলে বাসাটির দখল নেন ছাত্রদল নেতা এস এম ফাহিম। ফাহিম সিলেট মহানগর ছাত্রদলের স্কুল বিষয়ক সম্পাদক।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে আলম বেগের বড় ছেলে সোহেল বেগ দেশে এলে মালিকানার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদল নেতা ফাহিম তাকে বের করে দিয়ে হত্যার হুমকি দেন। পরে তিনি বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও বাড়িটি দখলমুক্ত করতে পারেননি। অবশেষে গত ২ জুন তিনি কোতোয়ালি থানায় ছাত্রদল নেতা ফাহিমসহ ৭জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আসামীরা হলেন, সিলেট নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এস এম হানিফের ছেলে ও সিলেট মহানগর ছাত্রদলের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এস এম ফাহিম (২৫), ওসমানী নগর উপজেলার খাপন খালপাড় গ্রামের মো. নুর খানের ছেলে যুবলীগ নেতা মো. শামীম খান (৪১), শামীমাবাদ এলাকার বাসিন্দা মৃত মসদ্দর আলীর ছেলে মো. আবুল কাশেম (৪৮) একই এলাকার বাসিন্দা মৃত আনিস আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৪) ও মো. নুর খানের ছেলে তুষার আহমদ। এছাড়াও সৈয়দ জুবায়ের আহমদ ও সৈয়দ জিলহাজ আহমদ নামে দুইজনকে মামলায় আসামী করা হয়েছে। মামলায় আরও ৪/৫জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।
বাড়ির মালিক সোহেল বেগ বলেন, বাড়িটি প্রথমে শামীম ও তুষার দখল করে নেন। তারা আমার বাসায় ভাড়াটে তুলে প্রতিমাসে হাজার হাজার টাকা আদায় করেছে। দীর্ঘদিন তারা এখানে আস্তানা বানিয়ে রেখেছিল। ৫ আগস্টের পর ছাত্রদলের ফাহিম বাড়িটি দখলে নেন। তিনি আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। আইনী প্রক্রিয়া শেষে বাড়িটি ফিরে পেয়েছেন।
তিনি বলেন, তাঁর বাবার কেনা এই বাড়ির পার্শ্ববর্তী আরও ৭-৮ শতক জমিও বেদখলে রয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের ভাই দখল করে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন। ৫ আগেস্টের পর তিনিও পলাতক রয়েছেন। সেই জায়াগটিও দখল মুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষের কাছে মুঠোফোনে বাসা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি বলেন আমি একটি মিটিংয়ে আছি।‘
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. রেজাউল করিম বলেন, দখলবাজরা এতোটাই প্রভাব খাটিয়েছে, তার প্রমাণ হলো বাড়ির নামটি পাল্টে ‘হোয়াইট হাউজ‘ রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে আমরা সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দেখেছি, বাড়ির প্রকৃত মালিক সোহেল বেগ। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বাড়িটি দখল মুক্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, যারা এখনও অবৈধ দখলদার আছেন, তারা নিজ থেকে প্রকৃত মালিকদের কাছে তাদের জমি বুঝিয়ে দিবেন। অন্যথায় আইন প্রয়োগ করা হলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দখল ছাড়তে হবে, জেলও খাটতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সোহেল বেগের আরও যেসব জমি বেদখলে রয়েছে, সেগুলোও ফিরিয়ে দেওয়া হবে। যারা অবৈধ দখলদার তারা স্বেচ্ছায় না গেলে আইনগত ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে দখলবাজদের ঠেকাতে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান পুলিশ কমিশনার।