সিলেটে উৎসবমুখর পরিবেশে ৯দিন ব্যাপী শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন মন্দির থেকে র্যালি আকারে রথযাত্রা শুরু হয়ে বিকেলে সিলেটের রিকাবীবাজারস্থ রথযাত্রা প্রাঙ্গণে সমবেত হয়ে এই উৎসব শুরু হয়। এসময় ভক্তবৃন্দরা পূজা, আরতী, প্রসাদ বিতরণসহ ভক্তিমূলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ৫ জুলাই শনিবার উল্টো রথযাত্রার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আয়োজক সিলেট দেবালয় রথযাত্রা উদযাপন কমিটির তত্ত্বাবধানে এবং সিলেট জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ সহযোগিতায় উৎসবটি শুরু হয়। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মুখরিত হয় রথযাত্রা প্রাঙ্গণ।
এর আগে প্রতিবছরের মতো এইবারও ইসকন মন্দিরের আয়োজনে নগরীতে রথযাত্রা নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা পালন করা হয়। এই শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ উপলক্ষে বিকেলে ইসকন সিলেটের যুগলটিলা মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় রথযাত্রার উদ্বোধনী আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন-বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন-ভারতের সহকারী হাইকমিশনার টি হ্যান্ড সিং, শাবিপ্রবির অধ্যাপক ড. নিলাদ্রী শেখর রায়, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু। সভাপতিত্ব করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ও সিলেট ইসকন যুগলটিলা মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ভক্তি অদ্বৈত নবদ্বীপ স্বামী মহারাজ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দেবামৃত নিতাই দাস।
এবার রথযাত্রা সফলভাবে সম্পন্ন করতে সিলেট জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে একাধিক মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাগুলোতে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এ বছরের রথযাত্রায় সিলেটের বিভিন্ন মন্দির ও দেবালয় অংশগ্রহণ করে। মন্দির ও দেবালয়গুলো হলো-শ্রীশ্রী কৃষ্ণ বলরাম জিউর আখড়া, লামাবাজার; শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়া, আম্বরখানা; শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ জগন্নাথ মণিপুরী মন্দির, শিবগঞ্জ; শ্রীশ্রী নৃসিংহ জিউর আখড়া, কালীঘাট; শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু জিউর মন্দির, রাজবাড়ী, মির্জাজাঙ্গাল; শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়া, নয়াবাজার; আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন); শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির, নরসিংটিলা; শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়া, কালীঘাট; শ্রীশ্রী মহাপ্রভু মন্দির, নরসিংটিলা; লালদিঘিরপাড় মণিপুরী পাড়া মন্দির পরিচালনা কমিটি; শ্রীশ্রী মহাপ্রভু মন্দির, সাগরদিঘিরপাড়; শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর আখড়া, মাছিমপুর; শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির, বড়বাজার; শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়া, সুবিদবাজার; শ্রীশ্রী মহাপ্রভু জিউর আখড়া, লামাবাজার; শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির, দক্ষিণ কাছ; শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়া, জিন্দাবাজার; শ্রীশ্রী ব্রজনাথ জিউর মন্দির, শিবগঞ্জ; নিম্বার্ক আশ্রম, মির্জাজাঙ্গাল; সিলেট দেবালয় রথযাত্রা উদযাপন কমিটি, লামাবাজার ও শ্রীশ্রী মহাপ্রভু আখড়া, পনিটুলা, সিলেট, শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দির, বহর নোয়াগাঁও, সিলেট ও শ্রীশ্রী মহাপ্রভুর আখড়া, ব্রাহ্মনশাসন, আখালীয়া সিলেট। উদ্বোধনী পর্ব শেষে তিনটি সুসজ্জিত রথে জগন্নাথদেব, শুভদ্রা ও বলরামের প্রতিকৃতিসহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রিকাবীবাজার রথযাত্রা মেলা প্রাঙ্গণে এসে শোভাযাত্রা শেষ হয়। এ সময় শঙ্খ, ঘণ্টা, কাঁসর, ঢোলের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো নগরী। ধর্মপ্রাণ পূণ্যার্থীদের জয়ধ্বনিতে উৎসবের আবহ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।