নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক)-এর আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচন বয়কটের ঘোষনা দিলেন সভাপতি প্রার্থী এনামুল আম্বিয়া। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ( ২৬ জুন) একসংবাদ সম্মেলনে নানা অভিযোগ তুলে তিনি নির্বাচন বয়কট করেন।
এনামুল আম্বিয়া লিখিত বক্তব্যে (ইংরেজি) বলেন, আগামী ২৮ জুন ২০২৫ বাক-এর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দিন ধার্য্য করেছে। যা সম্পূর্ণ্রুপে একটি পাতানো নির্বাচনের নীল নক্সা মাত্র। আসন্ন এ নির্বাচনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কোন ফল না পেয়ে বাধ্য হয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কানেকটিকাটের প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে সকল অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, কেবল বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক) প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নয়, বরং জনগণের – বিশেষ করে আমাদের তরুণ প্রজন্মের – প্রতিনিধি হিসেবে এসেছি। এমন এক প্রজন্ম, যারা স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার এবং প্রকৃত নেতৃত্ব পাওয়ার যোগ্য।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা বাক-২০২৫ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বারবার গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমরা প্রমাণ পেশ করেছি, নির্বাচন কমিশনের কাছে আপত্তি জানিয়েছি এবং অভ্যন্তরীণভাবে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সদিচ্ছার সাথে চেষ্টা করেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের এই উদ্যোগগুলোর জবাব এসেছে নীরবতা, অবহেলা বা অস্পষ্ট কথাবার্তার মাধ্যমে, আর নির্বাচনী কার্যক্রম চলতে থেকেছে বাক-এর নিজস্ব গঠনতন্ত্র ও উপবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন,
বাক-এর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিটি থাকা প্রয়োজন হলেও ১৩ এপ্রিল পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। তাছাড়া নির্বাচনের ঘোষণাও নির্ধারিত ৭ সপ্তাহের আগাম সময়ের বদলে মাত্র ৩ সপ্তাহ আগে দেওয়া হয়।
ভোটার তালিকা সময়মতো প্রকাশ না করায় প্রার্থী সমান প্রচার-সুযোগ পাননি। এমনকি ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তারিখ ৩০ মে-র বদলে তাঁকে দেওয়া হয় ১১ জুনে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর।
কমিশনার হাসান খালেদ দীপের স্ত্রী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পাশাপাশি, ২২ জুন একজন প্রার্থী অনলাইনে গোপন ভোটসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেন, যা ২৩ জুন পর্যন্ত অপর প্রার্থীর অজানা ছিল।
ভোটকেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশ প্লাজা নির্ধারণ করা হয়েছে, যেটি একজন প্রার্থীর ব্যক্তিগত মালিকানাধীন – যা নিরপেক্ষতা নষ্ট করে। অভিযোগকারীর নিবন্ধিত ভোট কেন্দ্র ম্যানচেস্টার হলেও ভোট গ্রহণ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ইস্ট হার্টফোর্ডে।
৩৬ জন অর্থপ্রদত্ত ভোটার তালিকায় বাদ পড়েছেন। এছাড়া ১,৭৮২ জন ভোটারের জমাকৃত মোট ১৭,৮২০ ডলার এবং প্রার্থীদের মনোনয়ন ফি বাবদ সংগৃহীত ৮,৯৫০ ডলারের কোন ব্যাংক ডিপোজিটের প্রমাণও প্রকাশ করা হয়নি।
এনামুল আম্বিয়া বলেন, আমি একজন প্রার্থী হয়ে এই নির্বাচনকে বৈধতা দিতে পারি না। এটি একটি প্রতারণামূলক নির্বাচন। আমাদের লক্ষ্য কেবল জেতা নয় – গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও কমিউনিটির সম্মান রক্ষা করা।”
নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি দ্রুত এ পাতানো নির্বাচন স্থগিত করে সম্পূর্ণ নতুন করে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।
ভোটগ্রহণের স্থান একটি নির্দিষ্ট প্যানেলের প্রভাবাধীন বলে মনে হচ্ছে, যা নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচারের মৌলিক নীতিকে লঙ্ঘন করে। এই সব গুরুতর বিষয় লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে আমি নিজে কমিশনার সুজা খান-এর সাথে কথা বলেছি, যিনি প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন যে তিনি নির্বাহী কমিটির নির্দেশেই এগোচ্ছেন, যদিও তাতে সংঘাত রয়েছে। এটি কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নয়, এটি দায়িত্বের বরখেলাপ এবং সুস্পষ্ট স্বার্থের সংঘাত।
কানেকটিকাটের বাংলাদেশি কমিউনিটি এর চেয়ে ভালো কিছু প্রাপ্য। আমরা এমন একটি নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রাপ্য যা ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক – এমন নয় যা দুর্নীতি ও গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি অবহেলায় কলুষিত।
আমি এসব দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গত মঙ্গলবার (২৪ জুন, ২০২৫) আদালতের শরণাপন্ন হই। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে একটি শুনানির দিন ধার্য্য করেন। যেহেতু শুনানির দিন ধার্য্য করা হয়েছে সেই কারণে এবং আমার সমর্থকদের পরামর্শ এবং নির্বাচনী চলমান প্রক্রিয়া ও সংবিধানের ধারা লঙ্ঘনের প্রতিবাদস্বরূপ আমি এনামুল আম্বিয়া এই প্রহসনের নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক বয়কট ঘোষণা করছি।
আমরা এমন একটি প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিতে পারি না, যা আমাদের মূল মূল্যবোধকে ধ্বংস করে। আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি – এই নির্বাচন অবিলম্বে স্থগিত করুন, স্বচ্ছতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুন এবং সম্পূর্ণভাবে বাক-এর সংবিধান ও উপবিধি মেনে একটি নতুন প্রক্রিয়া শুরু করুন। এটি আত্মসমর্পণ নয়-এটি একটি প্রতিবাদ।
সংবাদ সম্মেলনে এনামুল আম্বিয়ার ইংরেজি লিখিত বক্তব্য বাংলায় পড়ে শোনান মইনুল রহমান।