যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আজ রোববার সকালে ইসরায়েলের বেশ কয়েটি স্থাপনায় ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এর মধ্যে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও রয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসি বলেছে, বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও সাহায্যকারী ঘাঁটি, কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার এবং একটি জৈব গবেষণা কেন্দ্রে আঘাত করেছে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র।
ইরানের অভিজাত সামরিক বাহিনী ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) বরাতে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব টেলিভিশন জানায়, দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবার একজন মুখপাত্র জানান, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র রাজধানী তেল আবিবসহ অন্ত ১০টি জায়গায় আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আজ রোববার সকালে সরাসরি হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে নিজেই এ হামলার খবর জানান।
পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রে সফলভাবে হামলা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে হামলায় অংশ নেওয়া সব বিমান ইরানের আকাশসীমার বাইরে রয়েছে। সফল অভিযানের জন্য মার্কিন যোদ্ধাদের অভিনন্দন। বিশ্বের আর কোনো সেনাবাহিনী এমন অভিযান চালাতে পারত না। এখন শান্তির সময়।’
আরেক পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন, ভারি বোমার আঘাতে মাটির ২৬২ ফুট গভীরে থাকা ফোর্দো পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে।
এরপর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘মনে রাখবেন, অনেক টার্গেট এখনো বাকি আছে। আজ রাতের লক্ষ্যবস্তু ছিল সবচেয়ে কঠিন, সম্ভবত সবচেয়ে আইনসঙ্গত। কিন্তু যদি দ্রুত শান্তি না আসে, তাহলে আমরা অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলতা, গতি এবং দক্ষতার সঙ্গে আঘাত হানব।’
পারমাণবিক স্থাপানায় হামলার বিষয়টি ইরানি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে যেই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কথা বলছে, আদতে সেখানে এমন কোনো পদার্থ নেই যা তেজস্ক্রিয়তা সৃষ্টি করে। ওই কর্মকর্তার মন্তব্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ইরানি কর্তৃপক্ষ বোমা হামলার আগেই হয়তো ওই স্থাপনাগুলো থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বা তেজস্ক্রিয় উপাদান সরিয়ে ফেলেছে।
গত ১৩ জুন ভোররাতে বিনা উসকানিতে ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে ইসরায়েল ও এর বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্রসহ ড্রোন হামলার আশঙ্কা থেকে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আগাম প্রতিরোধমূলক হামলা চালানো হয়েছে।
ওই হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে। জবাবে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইরানও। আজ দশম দিনে গড়াল ইসরায়েল–ইরান সংঘাত। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সংঘাতে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের ২৪ জন নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে গত আট দিনে ইরানে অন্তত ৪৩০ জন নিহত হয়েছেন। এ সময়ে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩ হাজার ৫০০ মানুষ।
তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অধিকার সংগঠনের সংবাদমাধ্যম হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি বলেছে, ইরানে নিহতের সংখ্যা ৬৫৭ জন।