ইরানের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার দাবি জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার (২১ জুন) প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং পরে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে হামলার বিষয়ে উল্লেখ করেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ওভাল অফিস থেকে সম্প্রচারিত তিন মিনিটের ওই ভাষণে তিনি বলেন, হামলাটি ছিল অসাধারণ সামরিক সাফল্য। তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের প্রধান অবকাঠামো পুরো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
ইরানের সামনে শান্তি অথবা ট্র্যাজেডির পথ খোলা রয়েছে বলে সতর্ক করে ট্রাম্প জানান, হামলা করার জন্য আরও লক্ষ্যবস্তু রয়েছে। শিগগিরই শান্তি না এলে আমরা ক্ষিপ্রতা, দক্ষতা এবং নৈপুণ্যের সঙ্গে সেখানে হামলা চালাবো।
ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কিছুটা রহস্য ধরে রাখা হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার তিনি নিজেই ইরানকে দু সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। অথচ সময় শেষ হওয়ার বহু আগেই হামলা চালিয়ে বসলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ভাষণের আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ইরানের প্রধান তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা নাতানজ, ইসফাহান এবং ফোর্দোতে হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ফোর্দোতে পুরো এক পে-লোড (বিমানে যে কার্গো বহন করা হয়) বোমা ফেলা হয়েছে। ফোর্দোর আর অস্তিত্ব নেই। যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইরানের এখনই রাজি হয়ে যাওয়া উচিত।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিমকে দেশটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শত্রুপক্ষের হামলায় ফোর্দোর একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে ট্রাম্প বলেছিলেন, ফোর্দোতে ছয়টি বাংকার বাস্টার ফেলা হয়েছে আর অন্য স্থাপনাগুলোয় ৩০টি টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলায় বি টু বোম্বার ব্যবহার করা হয়েছে।
বি টু বিমানের গতিবিধি নিয়ে শনিবার হামলার অনেক আগেই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রয়টার্স।
এদিকে, মার্কিন হামলার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ট্রাম্পের পদক্ষেপকে সাহসী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইতিহাসের পাতায় এটি লেখা থাকবে।
গত ১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি হামলা থেকে চলমান সংকটের সূচনা। তেল আবিবের দাবি, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে এই অভিযান চলছে। অপরদিকে, বরাবরের মতো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কথা অস্বীকার করে এসেছে ইরান।
ইরানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চলমান হামলায় অন্তত ৪৩০ জন মানুষ নিহত এবং সাড়ে তিন হাজারের বেশি আহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের অন্তত ২৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে নেতানিয়াহুর কার্যালয়।