আমেরিকা যদি ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে ইরানে হামলায় যোগ দেয় তবে তা পুরো অঞ্চলের জন্য নরক ডেকে আনবে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খাতিবজাদেহ। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।
সাঈদ খাতিবজাদেহ বলেন, ‘আমেরিকার ইসরায়েলি হামলায় যোগদান পুরো অঞ্চলের জন্য নরক ডেকে আনবে। এটি আমেরিকার যুদ্ধ নয় এবং যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এতে জড়িত হন, তাহলে তাঁকে সর্বদা এমন একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্মরণ করা হবে যিনি এমন একটি যুদ্ধে প্রবেশ করেছেন যার তিনি অংশ নন।’
উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা জড়িত হলে এই সংঘাতকে তা ‘জলাবদ্ধ’ করে তুলবে, আগ্রাসন অব্যাহত রাখবে এবং নৃশংসতা বন্ধ করতে বিলম্ব করবে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ইসরায়েলের সোরোকা হাসপাতালে আঘাত হানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। এর পরপরই এমন মন্তব্য এল ইরান সরকারের পক্ষে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, হামলাটি হাসপাতালের পাশের একটি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে করা হয়েছিল।
ইরান–ইসরায়েল সংঘাতে আমেরিকা সরাসরি জড়াবে কি না তা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
এ অবস্থায় বিবিসির সাথে কথা বলার সময় খাতিবজাদেহ জোর দিয়ে বলেন, ‘অবশ্যই কূটনীতিই প্রথম বিকল্প, কিন্তু বোমাবর্ষণ অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও আমরা কোনো আলোচনা শুরু করতে পারি না।’
তিনি বারবার ইসরায়েলের ওপর ইরানের আক্রমণকে জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদের অধীনে আত্মরক্ষা বলে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা কূটনীতির মাঝখানে ছিলাম, যখন ১৩ জুন সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ শুরু করে, যার ফলে বেশ কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন।’
উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সংঘাতকে ‘বিনা উসকানিতে’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলেও অভিহিত করেছেন।
ইরান যদি পারমাণবিক চুক্তি মেনে নিত তবে সংঘাত এড়ানো যেত বলে ট্রাম্পের বারবার করা মন্তব্যের জবাবে খাতিবজাদেহ বলেন, ‘আমরা মাস্কাটে ষষ্ঠ দফা পারমাণবিক আলোচনার পরিকল্পনা করছিলাম, এবং আমরা আসলে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর দ্বারপ্রান্তে ছিলাম। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অন্য কারো চেয়ে ভালো জানেন যে, আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি।’
উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী খাতিবজাদেহ ট্রাম্পের ‘বিভ্রান্তিকর এবং পরস্পরবিরোধী’ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ও সাক্ষাৎকারেরও সমালোচনা করেছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি শুক্রবার থেকে বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছেন। সংকটের কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা করছেন তাঁরা।
খাতিবজাদেহ বলেন, ‘আপনি অনুমান বা উদ্দেশের ভিত্তিতে যুদ্ধ শুরু করতে পারবেন না। আমরা যদি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চাইতাম, তাহলে আমাদের এটি অনেক আগেই হয়ে যেত। ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য কোনো কর্মসূচি তৈরি করেনি। এটাই মূল কথা।’
গত ১৩ জুন ভোররাতে ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি পক্ষে বলা হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে ইসরায়েল ও এর বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্রসহ ড্রোন হামলার আশঙ্কা থেকে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আগাম প্রতিরোধমূলক হামলা চালানো হয়েছে।
ওই হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে। জবাবে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইরানও। সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ইরানে অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস। ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২৪।