Main Menu

আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলসে এত বিক্ষোভ কেন?

অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার ইস্যুতে উত্তাল আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলস। গত শুক্রবার থেকে সেখানে চলছে বিক্ষোভ। প্রতিদিন বাড়ছে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা। রাস্তায় পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি। স্থানীয় সময় রোববার রাতে শুরু হয় দোকান লুট। এরই মধ্যে বেশকিছু দোকানে লুটের অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

সংবাদমাধ্যম এবিসি ডট নেট বলছে, লস অ্যাঞ্জেলসে পুলিশ বেশ কয়েকটি সমাবেশকে বেআইনি ঘোষণা করেছে। তাদের অভিযোগ, কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশের দিকে কংক্রিট, বোতল ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছুঁড়ে মারছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় শহরের একটি রাস্তায় বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে এক্সে এক পোস্টে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার শুরু হচ্ছে। তবুও প্ল্যাকার্ড বহনকারী বিক্ষোভকারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হচ্ছেন। পার্টি ফর সোশ্যালিজম অ্যান্ড লিবারেশনের লস অ্যাঞ্জেলেস শাখা সিটি হলের বাইরে রোববার বিকেলে সমাবেশের আয়োজন করে। এরই এক পর্যায়ে আবার সংঘর্ষ হয়।

অভিযানের প্রতিবাদে রোববার টানা তৃতীয় দিনের বিক্ষোভ হচ্ছে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের সময় ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা ফেডারেল সরকারি ভবনের চারপাশে মোতায়েন ছিলেন। বিক্ষোভ দমনে এর আগে ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ডের ২ হাজার সেনা রাস্তায় মোতায়েনের নির্দেশ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু বিক্ষোভ এখনো দমানো যায়নি। এরই মধ্যে ৩০০ সেনা মাঠে নেমেছেন।

বিক্ষোভ শুরু হয় গত শুক্রবার। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার শুরুর পর রাস্তায় নামেন অনেকে। তারা বলছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসনবিরোধী কার্যক্রম আরও বেড়েছে। প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার অভিবাসী আটক করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে হোয়াইট হাউস। এই অভিযান বাস্তবে বৈধ স্থায়ী বাসিন্দাদেরও ভুক্তভোগী করছে, যা নিয়ে একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।

সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে ভেনেজুয়েলার একটি গ্যাংয়ের সদস্যের তকমা দিয়ে ২৩৮ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ঘটনা। গ্রেপ্তারের পরই তাদেরকে সোজা পাঠিয়ে দেওয়া হয় এল সালভাদরের কারাগারে। নিজেদের পক্ষে আইনি লড়াই করার জন্য অন্তত একটা দিনও দেওয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের চাপের কারণেই প্রশাসন বাধ্য হয়ে এত তড়িঘড়ি করছেন। আর এই তাড়াহুড়োর কারণেই এখন জনতার আগুনে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলস।

আর এসব বিশেষ অভিযান হতো খুব বাজে ও অমানবিকভাবে। এ নিয়ে খোদ লস অ্যাঞ্জেলসের মেয়র কারেন বেস প্রতিবাদ করেছেন। এতে তাঁর সমর্থন নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, সীমান্ত সুরক্ষিত করা ছিল ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। প্রচারের সময় তিনি যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, অবৈধ অভিবাসীরা অপরাধের জন্য দায়ী। যারা অবৈধভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করে, তাদের ‘বিশেষ প্রাণী’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, এরা মার্কিনদের ‘রক্তে বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে’। তিনি প্রমাণ হিসেবে বেশকিছু উদাহরণও দিয়েছিলেন, যার সবগুলো সত্য ছিল না বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

টেক্সাসের একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যম এবিসি ডট নেট বলছে, ট্রাম্পের নতুন নীতির কারণে অবৈধদের চেয়ে বৈধরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া এভাবে আর যাই হোক না কেন, অপরাধ দমন করা যায় না।

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক ও ইলিনয়ে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন অভিবাসনবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত আইসিইর সদস্যরা। ভোটের হিসাব বলছে, গত নির্বাচনে এখানে সমর্থন বেশি পেয়েছে ট্রাম্পের বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটরা। এমনকি ট্রাম্প এ নিয়ে কয়েকবার নিজের ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। এই এলাকা তাঁর দখলে নেই বলে মন্তব্য এসেছে। এবিসি বলছে, তিনি এ কারণে এই শহরে বেশি সক্রিয় রেখেছেন আইসিইর সদস্যদের।

এ ছাড়া আরও একটি কারণ হতে পারে, আমেরিকার সবচেয়ে বেশি অভিবাসী থাকে এই ক্যালিফোর্নিয়ায়। এই অঙ্গরাজ্যের ১ কোটি ৬ লাখ বাসিন্দার জন্ম এখানে নয়। আমেরিকায় বসবাসীদের মধ্যে যতজন দেশটিতে জন্ম নেননি, তাদের মধ্যে ২২ শতাংশই থাকেন এই ক্যালিফোর্নিয়ায়। আর পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য বলছে, এখানকার ১৮ লাখ অভিবাসী এখনো বৈধ হননি।

তবে কারণ যাই হোক, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি ট্রাম্প। এখনো রাস্তায় দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভ, পুলিশের গাড়িতে চলছে ভাঙচুর। গাড়ি দেখলেই ঢিল ছুঁড়ছে জনতা। এ ছাড়া সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে লুট। সব মিলিয়ে লস অ্যাঞ্জেলস এখন উত্তাল।

আর এমন এক সময়ে এই বিক্ষোভ শুরু হলো, যখন ট্রাম্পের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে পরিচিত ধনকুবের ইলন মাস্কের সঙ্গে তাঁর এখন ‘সাপে নেউলে’ সম্পর্ক। এই সম্পর্কের কারণে শেয়ার বাজার থেকে শুরু করে নিজের দলে পর্যন্ত বেশ ঝামেলায় পড়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্যেই এই বিক্ষোভ। ট্রাম্প কীভাবে এতকিছু সামলাবেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Comments are Closed

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.