Main Menu

পর্যটকে সরগরম সিলেট, পছন্দের শীর্ষে সাদাপাথর

যতদূর চোখ যায় দু’দিকে কেবল সাদা সাদা পাথর, মাঝখানে স্বচ্ছ নীল পানি আর পাহাড়ে মেঘের আলিঙ্গন। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনার অশান্ত শীতল পানির অস্থির বেগে বয়ে চলা, গন্তব্য ধলাই নদীর বুক, প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে তার অপরূপ এক রাজ্য।

স্বচ্ছ নীল পানি আর পাহাড়ের সবুজ মিলেমিশে একাকার। নদীর বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথরের বিছানা নদীটির শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে হাজারগুণ।

বলছিলাম সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথরের কথা। সাদাপাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা ঝরনার পানির তীব্র স্রোতে নয়ন জুড়ায় আর শীতল পানির স্পর্শে প্রাণ জুড়িয়ে যায় নিমিষেই। শহুরে যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেতে সারাদেশ থেকেই ছুটে আসেন পর্যটকরা। পথে যেতে দূর থেকেই পাহাড়ের সৌন্দর্য মন কাড়বে আপনার। মন চাইবে দু’হাতে জড়িয়ে প্রকৃতির এই সৌন্দর্যকে আলিঙ্গন করতে।

সাদাপাথর পর্যটন স্পট ছবিতে অনেকটা বিছনাকান্দির মতো দেখতে মনে হলেও সামনাসামনি দেখলে পার্থক্যটা ধরা পড়বে। পাথরের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে বয়ে চলা ধলাইর কলকল শব্দে পাগল করা ছন্দ। আর নৌকা করে সাদা পাথর যাওয়ার পথে চোখে পড়বে রেলওয়ে রজ্জুপথের। যেটি দেখতে অনেক সুন্দর লাগবে আপনার। সিলেট থেকে সাদা পাথর পর্যন্ত পুরোটা পথই প্রকৃতি তার সৌন্দর্যে বিমোহিত করবে যে কাউকে। সে কারণে ছুটির দিনে পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র।

যেকোনো বাহনেই আসুন, সিলেট শহরে নেমে পৌঁছাতে হবে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্টে। সেখান থেকে বিআরটিসির দোতলা বাসা অথবা সাদাপাথর পরিবহনের মিনিবাসে যেতে পারেন ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। চাইলে রিজার্ভও নেয়া যেতে পারে। বিকল্প হিসেবে রয়েছে সিএনজিচালিতঅটোরিকশা ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা। বাস কিংবা অটোরিক্সা গন্তব্যে যেতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। তারপর পৌঁছবেন সাদাপাথর ঘাট। ঘাটের মুখে ছোট-বড় কিছু দোকান রয়েছে। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা।

সাদাপাথর ঘাট থেকে স্পটে যাওয়ার একমাত্র বাহন শুধু নৌকা। ভাড়া পড়বে ৮০০ টাকা। নৌকাগুলোতে ওঠা যায় ৮-১০ জন। নৌকায় একজন গেলেও ভাড়া ৮০০ টাকা।

২০ মিনিট নৌকা চলার পর ধলাই নদী পেরিয়ে পৌঁছে যাবেন সাদাপাথরের রাজ্যে। তপ্ত রোদে পোড়া বালুপথ শেষে চোখে পড়বে পাথর আর পাথর। পাথর বিছানার ওপর দিয়ে ধেয়ে যাচ্ছে ঝরনার পানি। দু’দিকে পাথর, মাঝে বয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ পানি।

শীতল পানিতে পা দিলেই মিলবে প্রশান্তি। আর এই পানিতে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যাবে নানা বয়সের পর্যটকদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে তাদের পানি সাথে খেলাধুলা।

সাদা মেঘে আবর্তিত পাহাড়গুলোর কাছে যাওয়ার অনুমতি নেই। কারণ ওগুলো প্রতিবেশী দেশের আওতাধীন। ওপাড়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি। তাই রয়েছে দু’দেশের সীমান্ত বাহিনী বিজিবি-বিএসএফের বিশেষ নজরদারি।

সারাবছরই সাদাপাথরে ঘুরতে যেতে পারেন। তবে বর্ষার মৌসুমে এ স্থানের সৌন্দর্য কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর হচ্ছে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। তবে শীত না পড়লে অক্টোবরেও সাদাপাথর থাকে পছন্দের শীর্ষে। অন্য মৌসুমে পাথরের সৌন্দর্য দেখতে পেলেও নদীতে পানির পরিমাণ কম থাকে। আর শীতকালে নৌকা চলাচল করার মতো পানি থাকে না। তখন পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে হবে।

সাদাপাথরের অবস্থান সিলেট শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে। ভোলাগঞ্জে গাড়ি থেকে নেমে নৌকা করে সেখানে যেতে হয়।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি সিলেটের পর্যটন স্পট ঘিরে পর্যটকদের আগ্রহ থাকে সারাবছর। এছাড়া যেকোনো ছুটিতে সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভিড় বাড়ে পর্যটকদের। ব্যতিক্রম নয় এবারো। কয়েকদিনের টানা ছুটিতে সিলেট এখন পর্যটকে সরগরম। তাই দীর্ঘদিনের মন্দাভাব থেকে চাঙা হচ্ছে সিলেটের পর্যটন অর্থনীতির। সকল দৃশ্যনীয় স্থানে ভিড় বাড়লেও পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে সাদাপাথর।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গাপূজাসহ চার দিন ছুটিকে কেন্দ্র করে সিলেটজুড়ে পর্যটকের আগমন। সাপ্তাহিক ও পূজার এই ছুটির সময়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ পর্যটকের পদচারণায় মুখর সিলেট।

প্রকৃতিকন্যা জাফলং, লালাখাল, সাদাপাথর, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, কুলুমছড়া, পান্থুমাইসহ সকল পর্যটন স্পটে এখন উৎসবের আমেজ।

স্থানীয়রা জানায়, বছরে দুই ঈদে পর্যটনখাতের মানুষগুলো বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে বসে থাকে। কিন্তু গত ঈদুল ফিতরে কিছুটা ব্যবসা হলেও ঈদুল আযহার সময় দফায় দফায় বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো। এর আগে, ২০২০ সালের করোনা এবং ২০২২ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় দীর্ঘসময় সিলেটে পর্যটনখাতে স্থবিরতা নেমে আসে।

ছুটির প্রথম দিন বৃহস্পতিবার থেকেই সিলেটের সাদাপথর, জাফলং, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, লালাখাল, পান্থুমাই, মায়াবী ঝরনাসহ পর্যটন স্পট সমূহে যে দিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। সিলেটের বেশিভাগ হোটেল-মোটেলের সব রুমেই পর্যটক রয়েছে। ব্যস্ত সময় পার করছেন পর্যটন এলাকার মাঝি-মাল্লা, ব্যবসায়ী, ফটোগ্রাফারসহ সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটকদের আগমন ঘিরে সবগুলো স্পটে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। চার দিনে সিলেটে অন্তত পাঁচ লাখ পর্যটকের ঢল নেমেছে বলে জানান পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

সতর্কতা
যেকোনো স্থান ভ্রমণের সময় সাথে নেয়া খাবার শেষে পলিথিন ব্যাগ বা অন্য কিছু পর্যটন এলাকায় ফেলা উচিত না। আর অবশ্যই ট্যুরিস্ট পুলিশের দেয়া নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সাঁতার না জানলে বেশি পানিতে নামা উচিত না। আর কোথাও ঘুরতে গেলে সাধে পর্যাপ্ত খাবার রাখা ভালো।

এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ বৃহস্পতিবার বলেন, টানা ছুটিতে সিলেটে পর্যটকের ঢল নেমেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.