Main Menu

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকাও দিচ্ছে না এস আলমের ব্যাংকগুলো

সঞ্চয়পত্র নিয়ে বিপদে পড়েছেন অনেক বিনিয়োগকারী। তাঁরা মুনাফার টাকা তুলতে পারছেন না, আসল টাকাও ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের মালিকানায় যেসব ব্যাংক ছিল, সেই সব ব্যাংকের সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকেরা এ সমস্যায় বেশি পড়েছেন। এর বাইরে দুর্বল কিছু বেসরকারি ব্যাংকও গ্রাহকদের সঙ্গে একই আচরণ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিষয়টি নিয়ে এক মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) এবং জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মধ্যে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোনো পথ বের করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো। ফলে টাকা না পেয়ে গ্রাহকেরা ব্যাংকগুলোতে গিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন চার ধরনের সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রেই এ ঘটনা ঘটছে। এগুলো হচ্ছে, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র।

গতকাল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন সচিবালয়ে বসে এ ব্যাপারে নিজের অসন্তোষ ও বঞ্চনার কথা এ প্রতিবেদককে জানান। তিনি বলেন, এস আলম গ্রুপের মালিকানায় ছিল, এমন একটি ব্যাংকে তাঁর হিসাব রয়েছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের বিপরীতে তিনি এ হিসাবেই মুনাফা পেয়ে আসছিলেন, যে অর্থ দিয়ে তিনি সাধারণত মাসিক বাজার-খরচ চালান। কিন্তু ব্যাংক এখন তাঁর মুনাফার টাকা দিচ্ছে না।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল অনেককেই ব্যাংকের শাখা পরিবর্তনের আবেদনপত্র নিয়ে যেতে দেখা গেছে। একজন আবেদনকারীর সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়, যিনি সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। নিজের ও ব্যাংকের নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘আমার টাকা আমি ফেরত পাচ্ছি না। অধিদপ্তরের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকেরও এ ব্যাপারে দায়িত্ব নেওয়া উচিত।’

মুনাফার টাকা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় ব্যাংকে জমা হলেও যাঁরা তা তুলতে পারছেন না এবং নিকট ভবিষ্যতে যাঁদের সঞ্চয়পত্র নগদায়ন (ম্যাচিউরড) হবে, তাঁদের অনেকেই জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরে ব্যাংকের শাখা ও হিসাব পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছেন। গত দুই মাসে সঞ্চয় অধিদপ্তরে এমন ২৭০টি আবেদন জমা পড়েছে। বছরের অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এ আবেদনের সংখ্যা অস্বাভাবিক। আবেদনকারীদের মধ্যে সরকারের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবেরাও আছেন বলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সূত্রগুলো জানায়।

বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে অথবা মালিকানায় ৯টি বেসরকারি ব্যাংক ছিল। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নামে–বেনামে বের করে নেওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোতে এখন চরম তারল্যসংকট বিরাজ করছে। আমানতকারীদের অনেকে তাঁদের গচ্ছিত অর্থ চাহিদামতো তুলতে পারছেন না। শীর্ষ পর্যায় ছাড়া ব্যাংকের কর্মকর্তারা বেতনের টাকা তুলতে পারছেন না। সাবেক সরকারের আমলে বিশেষ তারল্য–সমর্থন দিয়ে এসব ব্যাংকে লেনদেন স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল।

সঞ্চয়পত্রের টাকা তোলার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে গতকাল জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর চিঠি পাঠিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি)। এই বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে বিষয়টি এখনো আসেনি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’

একই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগকে। সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের ব্যাংক হিসাব পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত সমন্বিত বাজেট ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি++, যা সংক্ষেপে আইবাস++ নামে পরিচিত। এটি হচ্ছে ইন্টারনেটভিত্তিক সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করা হয়।

কাজটি পরিচালিত হচ্ছে অর্থ বিভাগের কর্মসূচি স্ট্রেংদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম টু এনাবল সার্ভিস ডেলিভারির (এসপিএফএমএস) মাধ্যমে। এসপিএসএমএফের জাতীয় কর্মসূচি পরিচালক ছিলেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, পদোন্নতি দিয়ে সরকার যাঁকে গত সোমবার জ্বালানি সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁর উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ১১৫ জন গ্রাহকের ব্যাংক ও ব্যাংকের শাখা পরিবর্তনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এই ফাঁকে ব্যাংক ও ব্যাংকের শাখা পরিবর্তনের আবেদন বেড়েই চলেছে।

মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এসপিএফএমএস থেকে শুধু কারিগরি দিকটি দেখা হয়। বাস্তবে গ্রাহকদের সবকিছু দেখার কথা সঞ্চয় অধিদপ্তরের। আর ব্যাংক হিসাব পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হলে কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে। গ্রাহকের অজান্তে তখন টাকা আত্মসাতের আশঙ্কা থাকে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকও এস আলমের মালিকানায় ছিল। পরিবর্তিত সময়ে এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়েছেন বিশিষ্ট ব্যাংকার নুরুল আমিন। সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের ব্যাংক থেকে মুনাফা না পাওয়ার সঙ্গে ব্যাংকের তারল্যসংকটের সম্পর্কের কথা তিনি নিশ্চিত করেছেন।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকের শাখা পরিবর্তনের আবেদন বাড়ছে। গতকাল ৩২টি আবেদন এসেছে। আবেদনকারীদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক পরিবর্তনের পদক্ষেপ অধিদপ্তর থেকে নেওয়া হচ্ছে। এতে আইনি কোনো বাধা নেই।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.