Main Menu

ভেষজ ফল পাকা পেঁপে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে

ভেষজ ফল পাকা পেঁপে বহু রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় পেঁপের অবস্থান অন্যতম। এটি কাঁচা ও পাকা দুভাবেই খাওয়া হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় সবজি ও পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া হয় পেঁপে। আর এটি পাওয়া যায় সারা বছরেই। পুষ্টিবিদরা বলছেন, পেঁপের মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা সারিয়ে তুলতে পারে বহু জটিল রোগ।

পেঁপের বৈজ্ঞানিক নাম কেরিকা পাপায়া। পেঁপে বৃহৎ প্রসারিত পত্র বিশিষ্ট একটি চিরসবুজ উদ্ভিদ। এর ফুল ক্রিম সাদা বা হলুদ-কমলা রঙের হয়। সবুজ লম্বাটে ডাবরের মতো ফলের ভেতরটা কাঁচা অবস্থায় থাকে সাদা। আর পাকলে ফলের গা হলুদ হয়ে যায়, ভেতরে গাঢ় হলুদ অথবা লাল হয়। পেঁপে পাকলে পানির পরিমান বেড়ে যায় এ কারণে ওজন বাড়ে। চমৎকার সুবাস ছড়ায়। পেটের সমস্যায় একটি চমৎকার মহৌষধ পেঁপে। কাঁচা অবস্থায় তরকারি বা সালাদ এবং পাকা ফল হিসেবে খাওয়া হয়। পেঁপের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকায়। বাংলাদেশ, ভারত, মেক্সিকো, ব্রাজিলে বেশি জন্মে।

পেঁপেতে রয়েছে প্যাপেইন ও কাইমোপ্যাপেইন নামের প্রচুর প্রোটিওলাইটিক এনজাইম। এ উপাদান আমিষ ভাঙতে ও হজমে সাহায্য করে। আর পাকা পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ ও সি। ভিটামিন এ ও সি শরীরের রোগপ্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যুদ্ধ করে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে, দাঁত, চুল, ত্বকের সুরক্ষা করে।

পেঁপের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। এছাড়াও পেঁপের মধ্যে থাকে ভিটামিন সি, এ, বি, ই, প্রোটিন, খনিজের প্রাকৃতিক উৎস, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যারোটিনয়েড, ফাইবার, পটাশিয়াম। পেঁপের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ লিউটিন। যা মানব দেহের জন্য খুব ভাল।

প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে ৭.২ গ্রাম শর্করা, ৩২ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ০.৮ গ্রাম আঁশ, ০.৬ গ্রাম আমিষ, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ৬.০ মি.গ্রা. সোডিয়াম, ৬৯ মি.গ্রা. পটাসিয়াম ও ০.৫ মি.গ্রাম আয়রন থাকে। এছাড়াও এতে কিছু পরিমাণে ভিটামিন ই, বিটাক্যারটিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা শরীর ও ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। পেঁপের মধ্যে ক্যালোরি থাকে মাত্র ৫৯। এছাড়াও কার্বোহাইড্রেট থাকে ১৫ গ্রাম, ফাইবার ৩ গ্রাম, থাকে ভিটামিন এ, সি। থাকে লাইকোপোপেন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীরের জন্য খুবই ভালো। সেই সঙ্গে পেশিও শিথিল হয়।

চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ, সকলেই এই ফলকে ‘মহাঔষধ’ বলে মনে করেন। শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে, বয়স্কদের অর্শের সমস্যায় আবার কম বয়সিদের ওজন কমানোর ডায়েটে পাকা পেঁপের স্থান সকলের আগে। বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজের প্রাকৃতিক উৎস পাকা পেঁপে চোখের জন্যও উপকারী। বিটা ক্যারোটিনে ভরপুর পাকা পেঁপে ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জেনে নিন পাকা পেঁপের স্বাস্থ্য উপকারিতা-

 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

পেঁপে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়— এই ধারণা ভুল। পেঁপের ‘গ্লাইসেমিক ইনডেক্স’ বা জিআই-এর মান অনেকটাই কম। তাই পরিমিত মাত্রায় ডায়াবেটিক রোগীরা নিজেদের ডায়েটে পাকা পেঁপে রাখতেই পারেন। পেঁপের মধ্যে সুগারের পরিমাণ খুবই কম থাকে। প্রতি এক কাপ পেঁপেতে ৮ দশমিক ৩ গ্রাম মিষ্টি থাকে। তাছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁপে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোধ করতে দারুণভাবে সাহায্য করে। এতে থাকা ‘পাপাইন’ নামক এনজাইম শরীরকে ভিতর থেকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁপেতে থাকা নানা পুষ্টি উপাদান টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।

 

অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর

ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর পাকা পেঁপে ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির যম। এ ছাড়াও পেঁপেতে আছে ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন সি এবং ই। তা ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

সংক্রমণ কমায়

পেঁপেতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, শরীরের ‘ফ্রি র‌্যাডিকেল’য়ের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটা ওজন কমাতে বাধা সৃষ্টিকারী সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।

 

বিপাক বাড়ায়

পেঁপে ক্যালসিয়াম, আঁশ, প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং আবশ্যিক পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ যা শরীরের বিপাক বাড়ায়। পেঁপে বিরক্তিকর চাপ কমায় এবং ক্ষতিকারক বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সাহায্য করে।

 

ক্যানসার প্রতিরোধ করে

ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর পাকা পেঁপে ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি প্রতিরোধ করে। এ ছাড়াও পেঁপেতে থাকা ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন সি এবং ই, ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

হজমে সহায়ক

পেঁপে মুখের রুচি ফেরায়। সেই সঙ্গে খিদেও বাড়ায় এবং পেট পরিষ্কার রাখে। পেট পরিষ্কার থাকলে গ্যাসের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুধু তাই নয়, যাদের পাইলসের সমস্যা রয়েছে, চিকিৎসকরা তাদের পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন।

 

চোখ ভালো রাখে

অপথ্যালমোলজি আর্কাইভস প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিদিন তিনবার পেপে খেলে চোখের বয়সজনিত ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। বয়স্কদের মধ্যে দৃষ্টি ক্ষতি প্রাথমিক কারণ, প্রতিদিনের খাবারে তলনামূলক ভাবে কম পুস্টি গ্রহণ করা। পেঁপে আপনার চোখের জন্য ভাল এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন এ, সি, ও ই এর উপস্থিতির কারণে।

 

প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

পেঁপে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ১০০ শতাংশ ভিটামিন সি পাওয়া যায় পাকা পেঁপে থেকে। শরীরে কোনও সংক্রমণ হলে, তা কমাতে চিকিৎসকরা পাকা পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন।

 

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে

পেঁপেতে কোনো ক্যালোরি নেই। আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। তাই যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন তারা খুব ভালো ফল পাবেন যদি প্রতিদিন একবাটি করে পাকা পেঁপে খেতে পারেন। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকলেই অন্যান্য রোগের সম্ভাবনাও কমে যায়।

 

হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে

হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পটাশিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদ্‌রোগ সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে এই যৌগ। প্রাকৃতিকভাবে পটাশিয়ামের উৎস হলো পাকা পেঁপে। এছাড়া পেঁপেতে থাকে লাইকোপোপোন ও ভিটামিন সি। যা আমাদের হার্টের জন্য বেশ ভালো। যা আমাদের খারাপ কোলেস্টেরলের হাত থেকে রক্ষা করে। যার ফলে হার্ট ভালো থাকে এবং রক্তসঞ্চালন ভালো হয়। এছাড়াও শরীরের যে কোনও রকম জ্বালা, প্রদাহ কমাতেও ভালো কাজ করে পেঁপে।

 

চুলের জন্যও উপকারী

চুলের জন্যও পেঁপে খুব উপকারী। যে কারণে পেঁপে মেশানো শ্যাম্পুর প্রচলন বেশি। এছাড়াও টক দইয়ের সঙ্গে পেঁপে মিশিয়ে চুলে মাখলে গোড়া শক্ত হয়। চুলের শাইনিং ভাব বজায় থাকে। এছাড়াও মাথায় উঁকুনের সমস্যা হলে পেঁপে ভালো কাজ করে।

 

পিরিয়ডের সমস্যা দূর করে

প্রতিদিন পেঁপে খেলে ইউটেরাসের পেশি ভালো করে কাজ করে। আর পেঁপের মধ্যে থাকা ক্যারোটিন শরীরে তাপ উৎপন্ন করে। এই দুই এর প্রভাবে ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ ভালো হয়। প্রাকৃতিকভাবে শরীরে ইস্ট্রোজেন উৎপন্ন হলে পিরিয়ডসের সমস্যা অনেকটাই মিটে যায় এবং ধারাবাহিকতাও বজায় থাকে।

 

ওজন কমায়

পাকা পেঁপেতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার থাকায় তা অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। পাশাপাশি বিপাকহারও বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও যারা ওজন কমাতে ডায়েট মেনে খাবার খেয়ে থাকেন, তাদের জন্যও ভালো পাকা পেঁপে। ওজন ঝরাতে অনেকেই অনেক রকম নামী-দামি দ্রব্য ব্যবহার করেন। বিভিন্ন সংস্থা তাদের বিজ্ঞাপনে বলেন, তাদের দ্রব্য নাকি বশেষ ‘ফ্যাট বার্নিং এজেন্ট’ থাকে। সে সব শেক, সাপ্লিমেন্ট, বড়ি খেলেই নাকি দ্রুত ঝরবে মেদ। পুষ্টিবিদদের মতে, সামান্য খরচ করেই আপনি কিন্তু রোগা হতে পারেন। ভরসা রাখতে পারেন পাকা পেঁপেতে।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.