Main Menu

স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যাশায় সাধারণ মানুষ

সব স্বপ্ন ও চাওয়া-পাওয়াকে পেছনে ঠেলে সবার এখন একটাই প্রত্যাশা- স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা। করোনাভাইরাসে অবরুদ্ধ নতুন বছরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। করোনামুক্ত বিশ্ব দেখতে চান তারা। আব্দুর রব বয়স পঁচাত্তর বছর। থাকেন তেজকুনী পাড়ার একটি এপার্টমেন্টে। দুই ছেলের জনক তিনি। বড় ছেলে সোহেল অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। ছোট ছেলে রাসেল বিসিএস’র জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এক সময় কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। ছেলেরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় অনেক আগেই ব্যবসা গুটিয়ে অবসর জীবন-যাপন করছেন আব্দুর রব। তার দৈনিক রুটিন ছিল সকালে ফজরের নামাজ মসজিদে পড়ে হাঁটতে যাওয়া। হেঁটে এসে নাস্তা করা। প্রতি ওয়াক্ত নামাজ তিনি মসজিদে গিয়ে পড়তেন। গত বছর মার্চ মাসে লকডাউনের আগে তিনি শেষ মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েছেন। আর মসজিদে যাওয়া হয়নি। ছেলেদের কড়া নিষেধ ঘরের চৌকাঠ পার হতে পারবেন না। নতুন বছরে আব্দুর রবের একটাই প্রত্যাশা তিনি যেন আগের মতো চলাফেরা করতে পারেন।স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারেন। আব্দুর রব বলেন, ঘরের বাইরে যাওয়ার এমন আকুতি আগে কখনো এভাবে অনুভূত হয়নি। আজ কত মাস মসজিদে যেতে পারি নাই। হাঁটতে যেতে পারি নাই। আত্মীয়-স্বজন কারো সঙ্গে দেখা নাই। ছেলেরা ঘরের বাইরে যেতে দেয় না। আমার এমনিতেই ঠাণ্ডার দোষ। ওরা ভয় পায় মনে করে করোনা হলে আমি আর বাঁচবো না। আমিও জানি এই বয়সে করোনা হলে মানুষ বাঁচে না। কত কাছের মানুষ চলে গেল এই করোনায়। নতুন বছর যেন করোনা মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে যেতে পারে মানুষ। রাহিন হলিক্রস কলেজে পড়ে। ২০২১ সালের এইচএসসি’র শিক্ষার্থী সে।

রাহিন বলেন- নতুন বছরে আমার একটাই চাওয়া আমি যেন স্বাভাবিকভাবে কলেজে যেতে পারি। এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারি। আমি অটো পাস চাই না। আগের মতো নিশ্চিন্ত শিক্ষাজীবন চাই। লেখাপড়া করে ভালো ফল পেতে চাই। যা আমাদের কাছে স্বাভাবিক ছিল এখন সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। দুই বছর আগে বিয়ে হয়েছে বিথীর। পরিকল্পনা ছিল বিয়ের দু’বছরে সন্তান নেয়ার। কিন্তু করোনা সব ওলটপালট করে দিলো। বিথী বলেন, ২০২১ সালে সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কিন্তু করোনার কারণে এখন আর সাহস পাচ্ছি না। সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় আছি। এদিকে নিহার গত বছর জুনে উচ্চ শিক্ষার জন্য কানাডা যাওয়ার কথা থাকলেও তার যাওয়া হয়নি। নিহা বলেন করোনার জন্য জীবন থেকে একটা বছর নষ্ট হয়ে গেল। সব যেবন ঠিক হয়ে যায়। ২০২১ সালে যেন কানাডায় যেতে পারি এটাই এখন চাওয়া। সুচিত্র গোমেজ সেন্ট লরেটো টিউটেরিয়াল স্কুলের শিক্ষিকা। তিনি বলেন- আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে- নতুন বছর এটাই আমার প্রত্যাশা।

শিক্ষার্থীরা যেন সুস্থ সুন্দরভাবে নিরাপদে লেখাপড়া করতে পারে- এটাই চাওয়া। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খাঁ খাঁ করছে। ২০২১ সালে এসে আমরা যেন স্কুলে যেতে পারি এমন প্রত্যাশা করতে হবে তা আগে কখনো চিন্তাও করতে পারিনি। মামুন ব্যাংকে চাকরি করেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে করার পরিকল্পনা ছিল তার। মামুন বলেন, করোনার জন্য ২০২১ সালেও বিয়ে করার সাহস পাচ্ছি না। সবকিছু স্বাভাবিক হলে তারপরই বিয়ে করার কথা ভাববো। করোনা তো আমাদের সব প্রত্যাশাকে থামিয়ে দিয়েছে। এখন মনে হয় করোনায় বিয়ে করে যদি মরে যাই তার চেয়ে বিয়ে না করা ভালো। একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে তো আর লাভ নেই। মারুফ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে গত এক বছর থেকে বসে আছে কোথাও চাকরি পাচ্ছে না। মারুফ বলেন, গত বছর তো করোনার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানেই সেভাবে লোক নেয়নি। বরং আরো ছাঁটাই করেছে। এবছর যদি সব স্বাভাবিক হয় তাহলে অন্তত চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবো। পাস করে বসে আছি। চাকরির জন্য চেষ্টা পর্যন্ত করতে পারছি না এর চেয়ে হতাশার আর কি আছে?

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.