Home » লেবাননে এক বাংলাদেশী নারী পাচারকারীকে ধরে পুলিশে দিল প্রবাসীরা

লেবাননে এক বাংলাদেশী নারী পাচারকারীকে ধরে পুলিশে দিল প্রবাসীরা

জসিম উদ্দীন সরকার, লেবানন: লেবাননের জুনি শহরের আধুনিস এলাকা থেকে শুকুর আলী(৩৮) নামক এক বাংলাদেশীকে নারী পাচারের অভিযোগে লেবাননের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে স্থানীয় প্রবাসীরা। গত শনিবার (১৭ মার্চ) তাকে আটক করা হয়। পাচারকারী চক্রের সদস্য শুকুর আলীর বাড়ি ফরিদপুর জেলায়।

জানা যায়, পাচারকারী শুকুর আলী লেবানন থেকে পাশ্চাত্যের গ্রীসে পাঠানোর কথা বলে ফুসলিয়ে হ্যাপি আক্তার(২৪) ও শাহনাজ আক্তার বেবি(৩৫) নামের দুই বাংলাদেশি নারীকে পাচার করে দেয়। পাচার হয়ে যাওয়া হ্যাপি মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার ধামালিয়া গ্রামের ফরিদা বেগমের মেয়ে এবং অপরজন শাহনাজ আক্তার বেবি ঢাকা গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর উপজেলার মধ্য ভুরুলিয়া গ্রামের মোঃ মনির হোসেনের স্ত্রী। তারা উভয়ই গৃহপরিচারিকার কাজে লেবাননে এসেছিলেন। স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের ধারণা এদেরকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এদিকে দুই মেয়ের খোঁজে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এখন পাগল প্রায়।

পাচার হওয়া হ্যাপির মা ভুক্তভোগী ফরিদা বেগম বলেন, তার মেয়ে হ্যাপি প্রতিদিনের ন্যায় কাজে যায় এবং ঠিক সময়মত বাসায় ফিরে আসে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে গেলেও রাত অবদি বাসায় না ফেরাতে ভীষণরকম চিন্তায় পরে যাই। সারারাত না ঘুমিয়ে চারিদিকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকি এবং আশেপাশের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। কিন্তু সবার একই কথা আমার মেয়ে হ্যাপিকে সারাদিন কেউ কোথাও দেখেনি। পরে লোকমুখে জানতে পারি শুক্কুর আলী নামক এক দালাল আমার মেয়ে এবং শাহনাজ আক্তার বেবি নামক মেয়েকে গ্রীস পাঠিয়ে দিয়েছে।

তখন সাইফুল ইসলাম ও সৈয়দ আমীর হোসেনের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। তখন তারা পাচারকারী শুকুর আলীকে কল দেওয়ার জন্য আমায় পরামর্শ দিলেন।

শুক্কুর আলীর সাথে মোবাইলে কথা বললে সে জানায়, আপনার মেয়ে গ্রীস পৌঁছেছে, কাজ করছে। তখন শুক্কুর আলীকে বাসায় আসতে বলি ভালভাবে বিষয়টি জানার জন্য। কিন্তু শুক্কুর আলী আসতে রাজি হয়না। তখন শুক্কুরকে বলি আরো দুজন মেয়ে গ্রীসে যেতে ইচ্ছুক আপনি কি তাদের পাঠাতে পারবেন? জবাবে শুকুর আলী বললো অবশ্যই পাঠাতে পারবো, কোথায় আসতে হবে বলেন? তারপর আমার বাসার ঠিকানা দিলে ঘন্টা খানিকের মধ্যে বাসায় চলে আসে। তখন সাইফুল ইসলাম ও সৈয়দ আমীর হোসেন এসে শুকুর আলীকে আটক করে।

তারপর জানতে পারি আমার মেয়েসহ শাহনাজ আক্তার বেবি নামক আরেক মেয়েকে সে পাচার করে দিয়েছে। এই কথাগুলো বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

কান্না জড়িত কণ্ঠে পাচার হয়ে যাওয়া হ্যাপির মা একটি কথাই বলেন, আমি থানা-পুলিশ, টাকা-পয়সা কিছুই বুঝিনা। আমি শুধু চাই আমার মেয়ে আমার কোলে ফিরে আসুক। এজন্য তিনি লেবাননে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করেন এবং তার মেয়ের জীবন ভিক্ষা চান।

পাচার হওয়া হ্যাপির ভাই জানান, আমরা আগেও শুনেছি শুক্কুর নারী পাচারকারী, আমার বোন গ্রীস যাবে আমরা জানিনা, আমরা কেউ বলতে পারবনা। আমার মা আমার বোনের জন্য শুধু কানাকাটি করছে। আমরা আমাদের মেয়েকে ফেরত চাই।

স্থানীয় প্রবাসী সাইফুল ইসলাম জানান, হ্যাপী মা তার নিকট সহযোগিতা কামনা করে সব খুলে বলেন যে, মেয়েকে খুজে পাচ্ছিনা, শুনেছি হ্যাপীকে শুক্কুর আলী নামে এক দালাল নাকি গ্রীস পাঠিয়েছে। শুক্কুর আলীকে সাইফুল ইসলাম আগে থেকেই চিনতেন, তখন তিনি হ্যাপীর মাকে আরো লোক গ্রীস যাবে বলে শুক্কুরকে ডেকে আনার বুদ্ধি দেন। শুক্কুর আসলে তখন শুক্কুর বলে হ্যাপী এখনো গ্রীস পৌঁছেনি, সে সিরিয়া আছে। তখন তাদের সন্দেহ হয় আর সাইফুল ইসলাম তখন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ও পুনর্বাসন সোসাইটি লেবানন যুব কমান্ডের সভাপতি সৈয়দ আমির হোসেন সহ যোগীতা কামনা করেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ও পুনর্বাসন সোসাইটি লেবানন যুব কমান্ডের সভাপতি সৈয়দ আমির হোসেন জানান, অত্যন্ত সুকৌশলে নারীর প্রলোভন দেখিয়ে জুনির আধুনিস এলাকায় পাচারকারী শুকুর আলীকে আনা হয়েছে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সব তথ্য বেরিয়ে আসে। বিষয়টি রাষ্ট্রদূত মহোদয়কে অবগত করলে তিঁনি তাঁর সহকারী খালেদের মাধ্যমে লেবাননের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেন।

তিনি আরো জানান, পাচারকারী শুকুর আলী সমাজের একজন নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত ব্যক্তি। সামান্যকিছু টাকার জন্য যারা নিজের দেশ এবং দেশের মেয়েদের বিক্রি করে দেয়। তাদেরকে বাঁচিয়ে না রেখে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা এখন সময়ের দাবী। পক্ষান্তরে পাচার হয়ে সিরিয়ায় থাকা দুই নারীকে উদ্ধার করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের নিকট জোর দাবী জানিয়াছেন তিনি। একি দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশীরাও।

এদিকে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানা যায়, মেয়ে দুজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *