Home » অনিশ্চিত যাত্রায় হতাশ চাকরিপ্রার্থীরা, নেই কোনো সুখবর

অনিশ্চিত যাত্রায় হতাশ চাকরিপ্রার্থীরা, নেই কোনো সুখবর

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত দেশের চাকরির বাজার। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই কর্মী ছাটাই করেছে। নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও নেই। আর সরকারি চাকরি অনেক পরীক্ষা আটকে আছে। কবে হবে জানা নেই কারোর। নতুন বিজ্ঞপ্তিও হচ্ছে হাতেগোনা। ফলে চাকরিপ্রার্থীদের সামনে কোনো সুখবরও নেই। অনেকের চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় হতাশার সাগরে পড়ে গেছেন তারা।

আবু বকর নামে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘পড়ালেখা শেষ করতেই বয়স হয় ২৪-২৫ বছর। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেড় বছর বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে চাকরির বয়স ফুরিয়ে আসছে। এতে আমরা যাঁরা চাকরির যুদ্ধে নেমেছি, তাঁরা হাবুডুবু খাচ্ছি।’

জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ‘লকডাউনের’ কারণে একাধিক পরীক্ষা স্থগিত করেছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। ৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষাও আটকে আছে। নন-ক্যাডারের কয়েকটি পরীক্ষাও স্থগিত রয়েছে। তবে গত ১৯ মার্চ ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া আগামী ৬ আগস্ট ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে।

এদিকে ৯ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার পদের ডজনখানের পরীক্ষা আটকে আছে। প্রস্তুতি থাকলেও করোনার কারণে এসব পরীক্ষা নিতে পারছে না ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি)। কবে হবে কেউ জানেন না।

এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অসংখ্য নিয়োগ পরীক্ষা আটকে আছে। অনেক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশের অপেক্ষায়। আগামী ২৬ জুন কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল কার্যালয়ের ৩০৯ অডিটর পদের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। সে পরীক্ষাও হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

আগামী জুলাইয়ে চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হতে চলা রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘স্বাভাবিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে অন্তত ১৫ থেকে ২০টি আবেদন করে রাখতে পারতাম। কিন্তু সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নেই বললেই চলে। ব্যাংকসহ অন্যান্য বড় বড় কোম্পানির বিজ্ঞপ্তিও খুবই কম। চাকরিপ্রার্থীদের ব্যাপারে সরকারও অনেকটাই নীরব।’ ফলে হতাশা ঘিরে ধরেছে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, গত দুই মাস ধরে চলা বিধি-নিষেধে তিতাস গ্যাস, সিলেট গ্যাস ফিল্ড, পল্লী বিদ্যুৎ, সেতু বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি সরকারি দপ্তর নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে। এ ছাড়া মাউশির প্রায় চার হাজার পদে নিয়োগের পরীক্ষাও আটকে আছে।

এ বিষয়ে মাউশির নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব ও উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. রুহুল মমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় লিখিত পরীক্ষা নিতে পারিনি। জুনে প্রতি শুক্রবার পরীক্ষা নিয়ে লিখিত পরীক্ষা শেষ করতে চেয়েছিলাম। ইন্টারভিড কার্ডও দেওয়া হয়েছিল। তবে করোনার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি।’ বিধি-নিষেধ শেষ হলে পরীক্ষা হবে বলে জানান তিনি।

সূত্র জানায়, চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষতি পোষাতে গত সেপ্টেম্বরে বয়সের ক্ষেত্রে ছাড় দেয় সরকার। তাতে গত বছরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত যাঁদের বয়স ৩০ বছর পেরিয়েছিল, তাঁরাও আবেদন করতে পেরেছেন। কিন্তু এখনো করোনা সংকট কাটেনি। এরমধ্যে সরকারিভাবেও নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করা ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ চাই’ প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র তানভীর হোসেন বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের গত দেড় বছরে মাত্র একটি বিসিএস পরীক্ষা হয়েছে। এখন বড় চাকরির বিজ্ঞপ্তিও নেই। আমাদের হিসাবে, প্রায় দেড় লাখ উচ্চশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী বয়স হারিয়েছেন।’ এ সময় করোনাকালীন প্রণোদনা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর করার দাবি জানান তিনি।

সবশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ পদ ফাঁকা রয়েছে। এনটিআরসিএর ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন গ্রহণ করলেও আদালতের নির্দেশনায় তা আটকে আছে। এখন সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো প্রকাশিত হলেও প্রার্থীরা আশা পেতেন বলে জানিয়েছেন তারা।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *