Home » সিলেটে ভূমিকম্প : ভবন পরীক্ষায় নেমেছেন বিশেষজ্ঞরা

সিলেটে ভূমিকম্প : ভবন পরীক্ষায় নেমেছেন বিশেষজ্ঞরা

সিলেটে ১০ দিনের মধ্যে ১০ দফা ভূমিকম্পের পর সম্ভাব্য বিপর্যয় আমলে নিয়ে জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নেমেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুপুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক দু’টি বিশেষজ্ঞ দল প্রথম দিনের পর্যবেক্ষণে নামেন।

এ সময় তারা নগরীর মধুবন সুপার মার্কেট, মিতালি ম্যানশন, সমবায় ভবন, সিটি সুপার মার্কেটসহ চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি ভবন পরিদর্শন করেন।

পর্যবেক্ষণের পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এপ্লাইড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের ডিন প্রফেসর ড. মোশতাক আহমেদ জানান, বন্ধ থাকা ৬টি মার্কেটের গুরুত্ব বিবেচনায় এগুলো দিয়েই তারা ভবনগুলোর সক্ষমতার বিষয়ে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। আরও বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ভবনগুলোর সক্ষমতা নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

তিনি জানান, এটি তাদের প্রাথমিক কার্যক্রম। ভবনগুলো সম্পর্কে জানতে তাদের আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। পর্যায়ক্রমে নগরীর সবগুলো ভবন সার্ভে করে ঝুঁকি নির্ণয় করবেন তারা।

জানা গেছে, এই মুহূর্তে বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণার চেয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকির শহরে মানুষকে বাঁচানো বা ক্ষয়ক্ষতি কিভাবে কমিয়ে আনা যায় সেদিকে লক্ষ রেখেই কাজ শুরু করেছেন। এর অংশ হিসেবে আগামী ৬ মাসের মধ্যে নগরীর সকল ভবনের সক্ষমতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন জমা দেবেন। চিহ্নিত করবেন ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন। এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে গতকাল বুধবার (৯ জুন) বিকেলে শাবিপ্রবিতে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাথে কাজ করতে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তে পৌঁছান শাবির বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এন্ড অ্যানভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভিতর যতগুলো ভবন আছে সবগুলো পরীক্ষা করা হবে। সিসিকের সমন্বয়ে আমরা এ কাজটি করব। কিন্তু এটা আমাদের পক্ষে একা করা সম্ভব না। তাই সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও ছাত্রদেরকেও নেওয়া হবে। সকলে মিলে কাজটি করব। এ ক্ষেত্রে সকল ভবন পরীক্ষা শেষ করতে হয়ত ৬ থেকে ৮ মাস সময় লাগতে পারে।

ভূমিকম্পের নতুন করে কোন ফল্ট তৈরি হয়েছে কি না তা নিয়ে কোনো গবেষণা করার পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জহির বিন আলম বলেন, ভূমিকম্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ফল্ট সেটি ডাউকি। সে হিসেবে এ ফল্ট যে কোন সময় ৬ মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি করার শক্তি রাখে। তাই এখন গবেষণার চেয়ে মানুষকে বাঁচানো বা ক্ষয়ক্ষতি কি ভাবে কমিয়ে আনা যায় সেদিকে লক্ষ্য দেওয়া জরুরি। কিন্তু নতুন কোনো ফল্ট তৈরি হয়েছে কি না সেটিও গবেষণা প্রয়োজন। সেটি নিয়েও কাজ হবে। আপাতত ক্ষয়ক্ষতি কমানোর পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি জরুরি।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ মে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৭ দফায় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে সিলেট। পরদিন ৩০ মে ভোর রাতে ফের ভূমিকম্প অনুভূত হয়। পরে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে নগর কর্তৃপক্ষ থেকে বড় ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা হিসেবে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে সিসিক। চিহ্নিত করা হয় ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। নির্দেশ দেওয়া হয় ১০ দিন বন্ধ রাখার। কিন্তু ৯ দিনের মাথায় গত সোমবার (৭ জুন) সন্ধ্যায় ফের দুই দফা ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে সিলেট নগর। ফাটল ধরা দেয় রাজা জিসি হাইস্কুলের ‘কামরান ভবন’ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবনে। এতে আবারও নড়েচড়ে বসেছে সিসিক কর্তৃপক্ষ। গ্রহণ করছে নতুন পদক্ষেপ।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *