Home » বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তা: শর্তের জালে ৫০ কোটি ডলার

বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তা: শর্তের জালে ৫০ কোটি ডলার

বিশ্বব্যাংকের শর্ত:

  • ব্যাংক পরিচালকদের ব্যাংকঋণের সুদের হারে ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়া।
  • পরিবারের সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ।
  • ঋণ অনুমোদনে জামানতের শর্ত শিথিল করা।

    করোনার কারণে বাজেটের টাকা জোগান দিতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। শুধু এনবিআরই নয়, সরকারের অর্থ জোগানের অন্য উৎসগুলোরও সামর্থ্য কমছে। গত এক বছরে করোনার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউও শুরু হয়ে গেছে। এখন নানা বিধিনিষেধ নিয়ে লকডাউন চলছে।

    এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য সরকার নতুন নতুন অর্থের উৎস খুঁজছে। ইতিমধ্যে বাজেটের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সরকার ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা চেয়েছে। এই অর্থ বাংলাদেশের প্রায় ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)।

    করোনার কারণে সরকারের আয় কমেছে। তাই বিশ্বব্যাংকের কাছে বাজেট সহায়তা চেয়েছে। কিন্তু নানা শর্তে আটকে আছে ৫০ কোটি ডলার।

    তবে বাজেটের জন্য এই সহায়তা সহজে পাওয়া যাবে না। তা নানা শর্তে আটকে আছে। এখন দর-কষাকষি চলছে। দেশের ব্যাংক খাতসহ গোটা আর্থিক খাতে দৃশ্যমান সংস্কার কী কী হলো, তা দেখতে চায় বিশ্বব্যাংক। অন্যদিকে দাতাদের কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকার অর্থ পেতে চায়। দুই পক্ষের এ ধরনের চাওয়া নিয়ে এখন দর-কষাকষি হচ্ছে।

    অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, অর্থের জোগান নিয়ে সংকটের কারণে তারা আগামী অর্থবছরের শুরুতেই নতুন বাজেট সহায়তা হিসেবে ৫০ কোটি ডলার চেয়েছিল। জুন মাসের আগেই যেন বিশ্বব্যাংকের বোর্ডসভায় তা অনুমোদন হয়, এমন ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল ইআরডি। কিন্তু দর-কষাকষিতে সহায়তা আটকে যাওয়ায় এখন সরকার চায়, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে যেন বিশ্বব্যাংকের বোর্ডসভায় তা পাস হয়। তবে দুই কিস্তি নাকি এক কিস্তিতে বাজেট সহায়তার অর্থ মিলবে, তা ঠিক হয়নি।

    বাজেট সহায়তা নেওয়ার সুবিধা হলো, এই অর্থ কোনো বিশেষ প্রকল্পে দেওয়া হয় না। সরকারকে সরাসরি অর্থ দিয়ে দেয় বিশ্বব্যাংক। সরকার ইচ্ছামতো যেকোনো খাতে এই অর্থ খরচ করতে পারে।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বাজেট সহায়তা দেবে। কবে নাগাদ পাব, তা ঠিক হয়নি। বাজেট সহায়তার টাকা যেকোনো খাতে খরচ করতে পারব।’ তবে তিনি বলেন, বাজেট সহায়তা দেওয়া নিয়ে বিশ্বব্যাংক কোনো শর্ত দেয়নি।

    এর আগে ২০১৯ সালে ৭৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছিল সরকার। সেই সহায়তা তিন কিস্তিতে পেয়েছে। শেষ কিস্তি দেওয়া হয়েছে কিছুদিন আগে। গত বছরের অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাংকের কাছে নতুন করে ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চায় বাংলাদেশ। সেটি পাওয়া নিয়েই এখন উভয় পক্ষের মধ্যে দর-কষাকষি চলছে।

    যোগাযোগ করা হলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বাজেট সহায়তার টাকা দিয়ে সরকার ইচ্ছামতো খরচ করতে পারে। তবে এ জন্য বিশ্বব্যাংক কিছু সংস্কারের শর্ত দেয়। এসব শর্ত পূরণের ‘টাইমলাইন’ও থাকে। অনেক সময় আগে কী সংস্কার করা হয়েছে, তা–ও জানতে চাওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাজেট সহায়তা পাওয়া কঠিন।

    সূত্র: প্রথম আলো

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *