Main Menu

৩৪০ দিনের চাকরিতে ২৫০ দিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি

শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোর

: সবসময় ক্যাম্পাসে থাকার শর্তে নিয়োগ পেয়েছেন রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। এ শর্ত অনুযায়ী স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকা থেকে রংপুরেও আসেন; ওঠেন সুপরিসর উপাচার্য ভবনে। কিন্তু দিন কয়েক যেতে না যেতেই আবার ঢাকায় সপরিবারে ফিরে যান তিনি। এরপর থেকে তিনি ঢাকাতেই থাকেন; আর মাঝেমধ্যে সভা-সেমিনারে যোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ সম্পর্কে এসব কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির বেশ কয়েকজন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের ভাষ্য, উপাচার্য বেশিরভাগ সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকেন না। সপ্তাহে দু-একদিন ক্যাম্পাসে থেকে আবার ঢাকায় চলে যান। কোনও কোনও সময় ঢাকা থেকে সকালের ফ্লাইটে সৈয়দপুরে নেমে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আবার ওই দিন বিকেলের ফ্লাইটে ঢাকায় চলে যান। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ‘ইচ্ছে হলে মাঝেমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তিনি’। একই কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একাধিক সূত্র। সূত্রগুলো জানায়, ২০১৭ সালের ১৪ জুন নিয়োগের পর উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ মাত্র ৯০ দিন ক্যাম্পাসে এসেছেন; যার মধ্যে ৩০ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি চলছিল। তার অনুপস্থিতির সময় তিনি অন্য কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যান না। এতে তার দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে চরম স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সূত্র আরও জানায়, রাষ্ট্রপতি ও আচার্য যে তিন শর্তে উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহকে নিয়োগ দিয়েছিলেন, তার একটি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাকে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকতে হবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবন করে দিয়েছে সরকার। সূত্র জানায়, নিয়োগের শর্ত মেনে শুরুতে উপাচার্য ভবনে উঠেন অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। ওই সময় তার সন্তানকে স্থানীয় একটি স্কুলেও ভর্তি করে দেন তিনি। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই তিনি আবার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় ফিরেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত এপ্রিল মাসে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ মাত্র পাঁচ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে দুই দিন আবার বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক সূত্র জানায়, গত মার্চ মাসের ৩০ তারিখ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ঢাকায় ছিলেন। ২ এপ্রিল বিকেলে এক ফ্লাইটে ঢাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তিনি। এরপর আবার ৩ এপ্রিল বিকেলে অন্য এক ফ্লাইটে আবারও ঢাকায় চলে যান। এরপর টানা সাত দিন ঢাকায় অবস্থান করে গত ১০ এপ্রিল বিকেলে এক ফ্লাইটে তিনি ক্যাম্পাসে আসেন। পরদিন ১১ এপ্রিল ক্যাম্পাসে মাদক ও জঙ্গিবিরোধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। ওই সমাবেশে পুলিশের আইজিপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পরের দিন ১২ এপ্রিল সকালের ফ্লাইটে তিনি আবারও ঢাকায় চলে যান। এর ২ দিন পর ১৪ এপ্রিল ঢাকা থেকে বিমানে রংপুর আসেন তিনি; পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পরের দিন ১৫ এপ্রিল আবারও বিমানযোগে ঢাকায় চলে যান। এ দুই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ছুটি ছিল। এরপর টানা ৬ দিন ঢাকায় অবস্থান করে ২১ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা থেকে বিমানে করে ক্যাম্পাসে আসেন। ২ দিন ক্যাম্পাসে অবস্থান করে আবার ২৩ এপ্রিল বিকেলে বিমানযোগে ঢাকায় চলে যান। এরপর ২৫ এপ্রিল সকালে ক্যাম্পাসে এসে ২৬ এপ্রিল সকালে ঢাকা চলে যান। এরপর টানা ৬ দিন ঢাকায় অবস্থান করে ৩ মে সাপ্তাহিক ছুটির দিন বিকেলে ঢাকা থেকে বিমানে করে রংপুরে আসেন। পরদিন ৪ মে বিকেলে আবারও বিমানযোগে ঢাকায় চলে যান। এরপর টানা ৫ দিন ঢাকায় অবস্থান করে ৯ মে বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার কবরে ফুল দিতে আসেন তিনি। ওই দিন বিকেলের ফ্লাইটেই আবার ঢাকায় ফিরে যান। পরের দিন ১০ মে আবারও সকালে বিমানে ক্যাম্পাসে আসেন; এদিন নারী ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি পুরস্কার বিতরণ করেন। এসময় ইউজিসির একটি সেমিনারে অংশ নেওয়ার জন্য ১২ মে পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন তিনি। এরপর ১৩ মে সকাল ১১টায় সৈয়দপুর থেকে বিমানে ঢাকায় ফেরেন। এরপর ১৭ মে সকালে ক্যাম্পাসে এসে বিকালের ফ্লাইটেই ঢাকায় ফিরে যান তিনি। এখন পর্যন্ত ঢাকাতেই অবস্থান করছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা জানান, মূলত কোনও সভা-সেমিনার বা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করতে রংপুরে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। এ ছাড়া, তাকে ক্যাম্পাসে পাওয়া যায় না। তার অনুপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলে বা ফাইলে স্বাক্ষরের প্রয়োজন হলে রংপুর থেকে ঢাকায় যেতে হয় সংশ্লিষ্টদের। তার অনুপস্থিতিতে অনানুষ্ঠানিকভাবে একজন জুনিয়র শিক্ষককে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। ওই শিক্ষক নিজেও ক্লাস নেন না। ওই শিক্ষক বেশিরভাগ সময় উপাচার্যের পিএস, এপিএসদের ওপর খবরদারি করেন। সিন্ডিকেট সভাকক্ষেও তার খবরদারি চলে। এই জুনিয়র শিক্ষকের হুকুম ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘একটি গাছের পাতা নড়ে না’ বলে প্রবাদও রয়েছে। তিনি (জুনিয়র শিক্ষক) বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম করে চলেছেন।

 

Leave a comment






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *