Home » দিহানের পক্ষে অদৃশ্য শক্তি, অভিযোগ বাদীপক্ষের

দিহানের পক্ষে অদৃশ্য শক্তি, অভিযোগ বাদীপক্ষের

রাজধানীর মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত তানভীর ইফতেখার দিহানের পক্ষে অদৃশ্য কোনও শক্তি কাজ করছে বলে দাবি করেছেন নিহত কিশোরীর বাবা। তার দাবি, সবকিছু দেখে আমাদের মনে হচ্ছে মামলার শুরু থেকেই তারা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। রবিবার (১০ জানুয়ারি) নিজ বাসায় এসব কথা বলেন ভিকটিম কিশোরীর বাবা।

তিনি জানান, দিহান নির্যাতিত কিশোরীর অপরিচিত ছিল না। তবে তাদের জানাশোনা পরিবার পর্যন্ত গড়ায়নি। বন্ধু মহলের কয়েকজন শুধু জানতো। মামলার বাদী ও ভিকটিম কিশোরীর বাবা বলেন, আমার মেয়ের স্কুলের বান্ধবীর এক বড় ভাই আছে। দিহানসহ ওই তিন ছেলে তার বন্ধু। ওখান থেকেই আমার মেয়ের সঙ্গে দিহানের পরিচয় বা চেনাজানা।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনায় মেয়েটির বাবা বলেন, ঘটনার দিন ঠিক ১২টা ১৯ মিনিটে আমার মেয়ের নম্বর থেকে কল আসে। আমি মিটিংয়ে থাকায় ফোনটা কেটে দেই। তারপর আর ফোন করেনি। তার কিছু সময় পর আমার স্ত্রীর ফোনে কল আসে। ফোন করে আমার মেয়ের অসুস্থতার কথা জানায়। প্রথম ফোনটা না ধরাটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় ভুল।

তিনি বলেন, মনে হয় আমার মেয়েকে যখন জোরজবরদস্তি করা হচ্ছিল তখনই সে আমকে ফোন করেছিল। আমি যদি ফোনটা ধরতে পারতাম বিষয়টা এতদূর গড়াত না। পরে আমাকে না পেয়ে আমার স্ত্রীকে ফোন করা হয়। তবে সেটা হাসপাতাল থেকে নাকি ওই বাসা থেকে এটা আমরা জানি না। হাসপাতালে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা আমাকে বলেন, ‘মারা যাওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে’। আমার মনে হয়, এমনও হতে পারে, ও কোচিং এ যাচ্ছিল। তখন ওই ছেলেরা রাস্তায় তাকে বাধা দেয়। তখন আমাকে আমার মেয়ে ফোন করে।

মামলার বাদীর অভিযোগ, দিহানের পক্ষে অদৃশ্য এক শক্তি কাজ করছে। তিনি বলেন, মামলার শুরু থেকে মনে হচ্ছে তারা বেশ সুবিধা পাচ্ছে। প্রথমে হাসপাতালে কালক্ষেপণ করা। থানা থেকে মামলার কাগজ ঢাকা মেডিক্যালে রাতে বা সকালে না পৌঁছানো। দেরিতে ময়নাতদন্ত। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে অসঙ্গতি। সবশেষে আদালতে উঠেই কারাগারে গিয়ে ঘুরে বেড়ানো। সবকিছু দেখে আমাদের মনে হচ্ছে তারা বিশেষ কোনও সুবিধা পাচ্ছে।

মেয়েটির বাবা আরও বলেন, আমার এক আত্মীয় আইনজীবী আছে। তারও এমনটা মনে হয়েছে। মামলা নিয়ে পুলিশের এসির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। ছেলেটা কী স্বীকারোক্তি দিলো আমরা জানতে চাই। পুলিশ বললো, ‘আমরা এটা নিয়ে বসবো। তারপর জানাবো’। সেটাও দুদিন হয়ে গেলো। কীভাবে যেন তারা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না।

কিশোরীর বাবা বলেন, যখন এজাহার লেখা হয় তখন খুব তাড়াহুড়া করা হচ্ছিল। কেননা, আমাদের হাসপাতালে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। তখন আমি পুলিশকে বলেছিলাম ৪ জনকে আসামি করতে চাই। কেননা, ছেলেটা যখন আমার স্ত্রীকে ফোন দেয় তখন সে বলেছিল, ‘আমরা বাসায় চার জন আছি’। আবার হাসপাতালেও দেখি চার জন। কিন্তু পুলিশ বললো মেডিক্যাল রিপোর্ট আসার আগ পর্যন্ত তাদের নাম না দেই। পরে যদি তাদের তিন জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, নাম যোগ করা হবে। আমিও মনে করলাম মিথ্যা বলে একটা দুইটা ছেলের জীবন এভাবে নষ্ট করতে চাই না। কারণ, আমি জানি একটা সন্তান মানুষ করতে কত পরিশ্রম লাগে। কিন্তু এখন সবকিছু দেখলাম। মেডিক্যাল রিপোর্ট শুনলাম। আমার বাচ্চাকে প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয়েছে। এ নির্যাতন আসলে একজনের পক্ষে করা সম্ভব না। এখন আমাদের মনে হচ্ছে, ঘটনার সঙ্গে চার জনই জড়িত থাকতে পারে। আমি আসলে বুঝতে পারিনি মেডিক্যাল রিপোর্ট কবে আসবে। কয়দিন লাগবে। তখনই তাদের নাম দেওয়া উচিত ছিল। পুলিশ কেন তাদের এত দ্রুত ছেড়ে দিলো? আরও একটু দেখতে পারতো। আর মামলাটাও তাড়াহুড়া করে হয়ে গেলো। চিন্তা করার সুযোগ মেলেনি।

ভিকটিমের বাবা বলেন, আমার মেয়ের বয়স কীভাবে ১৯ হলো। আমরা বুঝলাম না। আমরা তো শুরু থেকেই বয়স ১৭ বলে আসছি। কিন্তু কে বা কারা ১৯ দিলো বুঝতে পারছি না। বিপদে পড়ে আমরা পাসপোর্ট, বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরেছি। পুলিশও যথেষ্ট আন্তরিক ছিল। তারা ভালো কথাবার্তা বলছেন আমাদের সঙ্গে। সাহায্য করেছেন। তবে কোনও একটা জায়গায় তারা এই ভুলটা করেছেন। যার জন্য এটা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। ভুল তথ্য দিয়ে মেয়েটাকে প্রাপ্ত বয়স্ক বানানোর চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দিহানের পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। দিহানের বড় ভাইও নাকি তার স্ত্রীকে মেরে ফেলেছিল। আমার মেয়ের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। তাদের শাস্তি চাই।

সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *