Home » করোনা রোগীদের নিয়ে লড়াইয়ের বর্ণনা দিলেন চিকিৎসক

করোনা রোগীদের নিয়ে লড়াইয়ের বর্ণনা দিলেন চিকিৎসক

ইউনিভার্সিটি হসপিটাল অব ব্রকলিন, নিউইয়র্ক । বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে আলখাল্লা মোড়ানো মানুষের সমাবেশ। কিছুক্ষণ পরপর সাইরেন বাজিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে আসছে অ্যাম্বুলেন্স। 

অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন কিছুক্ষণ পরপর শোনা গেলেও হাসপাতালের ভেতরে থাকা সাইরেন বাজছে প্রতিনিয়ত। হয়তো নতুন রোগী এসেছে অথবা কোনো রোগীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বা কাউকে ভেন্টিলেটর লাগাতে হবে। আবার হয়তো কারও মৃত্যু হয়েছে। এসব কারণে ব্যস্ততার সঙ্গে নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন এই মানব দুর্দিনের সৈনিক চিকিৎসকরা। 

শ্বাসকষ্টের থেরাপিস্ট জুলি ইজন সিএনএনকে বলেন, তারা এতটাই অসুস্থ যে তাদের যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যু হতে পারে।

তিনি বলেন, একটি ইমারজেন্সি রুমে ৪০ মিনিটের মধ্যে ছয়জন রোগী হৃৎপিণ্ড জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মৃতদেহ দ্রুত সরিয়ে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা মাত্রই সেই বেডে তুলে দেওয়া হচ্ছে অন্য রোগীকে। এমন চিত্রই এখন সানি ডাউনস্টেট হেলথ সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির।

এই বিষয়ে ডা. লরেঞ্জো পালাদিনো বলেন, ‘রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে হাসপাতালের পরিবেশ এখন এমন হয়েছে।’ তিনি জানান, বেশির ভাগ রোগীদের ক্ষেত্রেই শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে ভেন্টিলেটর দেওয়া হয়। এই ভেন্টিলেটর নিরাময়ের কোনো যাদুকরি যন্ত্র নয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভেন্টিলেটর দেওয়া রোগীর বেঁচে থাকার হার অনেক কম।

এই হাসপাতালে প্রায় ৪০০ রোগী রয়েছে যাদের প্রত্যেকই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানান ডা. লরেঞ্জো পালাদিনো। তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৯০ শতাংশের বয়স ৪৫ এর উপরে, ৬৫ বছরের উপরে থাকা রোগীর হার ৬০ শতাংশ। বয়োবৃদ্ধদের পাশের বেডেই শুয়ে আছে তরুণ কিংবা শিশু। এই হাসপাতালে সর্বকনিষ্ঠ রোগী বয়স তিন বছর, আছে ২০ -২৫ বছরের তরুণরাও।

ডা. লরেঞ্জো পালাদিনোর সঙ্গে কাজ করা ডা.সিন্থিয়া বেন্সন বলেন, ‘চিকিৎসক, নার্স, থেরাপিস্ট সকলেই নিরন্তর ও শান্তভাবে এই মহামারির বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে।

জরুরি বিভাগের নিবন্ধিত নার্স এবং পরিচালক চেরিল রোলস্টন বলেন, আমি মনে করি নার্সিং হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন একটি কাজ। আমরাও সবসময় লোকদের আরও উন্নত করার দিকে তাকিয়ে থাকি। আমাদের অপ্রতিরোধ্য মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে যা আমরা পেতে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর সময়ও রোগীদের পাশে থাকতে পারছেন না প্রিয়জনরা। আমাকে এক রোগীর ছেলে একদিন ফোন করেছিল এবং সে বলেছিল, আমার বাবা ৮০ বছর বয়সী … আমি জানি তিনি মারা যাবেন … এবং আমি তার মৃত্যুর সময় পাশে থাকতে পারছি না।

ডাউনস্টেটের পালমোনারি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. রবার্ট ফোরনজি বলেন, ‘তিন সপ্তাহ আগে আমার জীবন বেশ স্বাভাবিক ছিল। প্রায় হঠাৎ করেই পরিবর্তিত হয়ে গেল। এটা সকলের জন্যই কঠিন। তবে যাদের জন্য আমার সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে তারা হচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। বিশেষত তাদের পরিবার যারা কখনো তাদের প্রিয়জনকে বিদায় জানার সুযোগ পায় না।

ডাউনস্টেট হেলথ সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি হসপিটাল অব ব্রকলিন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় ২৫ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন।

সফটওয়্যার সল্যুশন কোম্পানি ডারাক্সে’র পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ওয়ার্ল্ডোমিটারে’ প্রকাশিত তথ্যমতে, বিপর্যস্তের তালিকায় প্রথমে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আক্রান্তের দিক থেকে বহু আগেই চীনকে ছাড়িয়ে গেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ৮৭১ জনের।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *