Home » পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা বৃদ্ধি

পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা বৃদ্ধি

অনলাইন ডেস্ক: রফতানিতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তার (ভর্তুকি) ঘোষণায় বাজারে চালের দাম আরেক দফা বেড়েছে। এক দিনের ব্যবধানে সবধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা। বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রেতা-বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, ধানের বাড়তি দামের অজুহাতে মিলমালিকরা এমনিতেই চালের দাম বাড়িয়ে চলেছেন। তার ওপর রফতানিতে ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্তকে মওকা হিসেবে নিচ্ছেন বিক্রেতারা। এ সুযোগে বিক্রেতারা বাড়াচ্ছেন কয়েকগুণ বেশি হারে। ফলস্বরূপ রাজধানী ঢাকার পাইকারি ও খুচরা বাজারে লাগামছাড়া বাড়ছে বাঙালির জীবনে অপরিহার্য এ খাবারের দাম।

দালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, রফতানিতে ভর্তুকি ঘোষণার সাথে সাথে মিলমালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। মিলগেটে চালের দাম বেশি, তাই বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্য দিকে মিলমালিকরা বলছেন, ধানের সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি। ধানের দাম বাড়ায় চালের দামও বেড়েছে। যদিও পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন ধানের দাম কিছুটা বেশি হলেও মিলমালিকদের যুক্তি সঠিক নয়। কারণ তারা এরই মধ্যে ধানের বিশাল মজুদ গড়ে রেখেছেন। আগের কম দামে কেনা ও এখন কেনা ধানের দামের সমন্বয় করতে তাদের সিন্ডিকেট চালের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেন চালবিক্রেতারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে বলেছে, সরকার রফতানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে দেশে উৎপাদিত ধান থেকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎপাদিত চাল রফতানির বিপরীতে ভর্তুকি দেবে। এ সুবিধা আলোচ্য সার্কুলার জারির তারিখ থেকে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাহাজীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। চাল রফতানির ক্ষেত্রে নিট এফওবি মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে প্রক্রিয়াকারী-রফতানিকারক ভর্তুকি প্রাপ্য হবে। সরকারি বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে ছাড়কৃত তহবিল থেকে ভর্তুকির জন্য দাখিলকৃত আবেদনের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অর্থ প্রদান করা হবে। তবে বিশেষায়িত অঞ্চলে (ইপিজেড, ইজেড) অবস্থিত প্রতিষ্ঠান থেকে রফতানির ক্ষেত্রে এবং সামগ্রীসহ অন্যান্য উপকরণের ওপর ডিউটি ড্র-ব্যাক ও শুল্ক বন্ড সুবিধা গ্রহণ করা হলে ভর্তুকি সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।

এ দিকে টানা প্রায় পাঁচ মাস অস্বাভাবিক আচরণ করে চলেছে পেঁয়াজ। দুই দিনের ব্যবধানে দেশী নতুন পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। খোদ টিসিবির হিসাবেই গত বছরের এ সময়ে প্রতি কেজি দেশী নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। আর গতকাল বিক্রি হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এক বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৬০০ গুণ দাম বেড়ে যাওয়ায় ‘লজ্জিত’ টিসিবি তার দৈনন্দিন বাজারদরের তালিকায় এ ঘরটি পূরণই করেনি। ১৬০০ টাকার এলাচ ছয় হাজার টাকা কেজিদরে বিক্রি হওয়ায় তালিকা থেকে মুছে দেয়া হয়েছে এ মসলাটির দামও। ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজিদরের রসুন এক বছরের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ২০০ টাকা।

পেঁয়াজ ও চালের পাশাপাশি আটা, তেল, ডাল, চিনিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। টিসিবির হিসাবেই এক মাসের ব্যবধানে আটার দাম কেজিতে ১৬ শতাংশ বেড়ে ২৬ থেকে ৪৫ টাকায় উঠেছে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯১ থেকে ৯৫ টাকা। পাম অয়েলের দাম ৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৪ টাকা। মসুর ডালের দাম ১১ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১৩০ টাকায়। এক কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

টিসিবির তথ্যানুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি সাধারণ সরু চালের দাম ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, পায়জাম চালের দাম দাম ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ, মোটা চালের দাম তিন দশমিক ০৮ শতাংশ, মাঝারি মানের চালের দাম ১১ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪২ শতাংশ। এক মাসে ১৮ শতাংশ এবং এক বছরের ব্যবধানে ৪৭ শতাংশ বেড়েছে শুকনো মরিচের দাম। তুরস্কের ডাল এক বছরের ব্যবধানে ৩৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। এক বছর আগে এ দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে গাজর এবং শসা। ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আর মুলা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে করলা ও ধুন্দুল। তবে কিছুটা বেশি দাম পেঁপের। প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে ঢেঁড়স। এক কেজির দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি শালগম ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং একেকটি লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

মাছের বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকাদরে। প্রতি কেজি কাচকি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, মলা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ছোট পুঁটি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশী চিংড়ি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙ্গাশ ১২০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, কৈ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, কাতল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি কেজি বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। পাকিস্তানি কক মুরগি ২১০ থেকে ২৪০ টাকা, লেয়ার মুরগি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, দেশী মুরগি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া গরুর গোশতের কেজি ৫৩০ থেকে ৫৫০ টাকা এবং খাসির গোশত ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। দেশী হাঁসের ডিমের ডজন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, ফার্মের মুরগির ডিম ৯৫ থেকে ১০০ টাকা এবং দেশী মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *