Main Menu

ভর্তি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে শাবি শিক্ষার্থীদের বাস ব্যবসা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আজ শনিবার। আগামীকাল রবিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা। ফলে অনেক পরীক্ষার্থীই সিলেট থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম যাবেন। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রাম যেতে আগ্রহী ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে বাস ব্যবসা শুরু করেছেন শাবি’র কিছু শিক্ষার্থী। পরিবহন স্বল্পতার সুযোগ নিয়ে অন্যায়ভাবে মুনাফা লোটার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

ভর্তিচ্ছু একাধিক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহ মোহাম্মদ শাকিল ক্যাম্পাসে এই ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বাসের সিট প্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বেশি নিচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজের নামে তিনি বাস ব্যবসা নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ জানিয়েছে, এ ব্যবসা চালানোর জন্য কারও কোনও অনুমতি নেননি ওই শিক্ষার্থী। শাকিলের দেখাদেখি আরও কিছু শিক্ষার্থী একই ধরনের ব্যবসা শুরু করেছেন বলেও জানা গেছে। 

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার পরদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থাকায় সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পরিবহন সেবায় টিকিট সংকট বেশ কিছুদিন থেকেই। এ বিষয়টি কাজে লাগিয়ে শাকিল কুমিল্লা ট্রান্সপোর্টের নিচু মানের ৪৫ সিটের ২০টি বাস ভাড়া করেন। যেগুলো বিভিন্ন সময়ে সিলেট থেকে চট্টগ্রামে যাবে বলে চুক্তি করা হয় বলে দাবি করছেন শাকিল। এই রুটের বিআরটিসি বাস সার্ভিসের ভাড়া ৬০০ টাকা; এনা, সৌদিয়া প্রমুখ পরিবহনের ভাড়া সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা। তবে শাকিল কুমিল্লা ট্রান্সপোর্টের নিম্নমানের বাসগুলোর ভাড়া প্রতি সিটভেদে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত রাখছেন পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে। উপায় না দেখে পরীক্ষার্থীরাও অতিরিক্ত মূল্যে টিকেট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন শাকিলের কাছ থেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও তিন-চারজন শিক্ষার্থী এই ধরনের ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অপু পাল, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের আলমগীর মাহবুব, লোকপ্রশাসন বিভাগের মাহবুবুর রহমান জনপ্রতি বাসের সিটভাড়া বাবদ ৮০০-৯০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন। এছাড়া পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের সরদার ইমন ও সাজ্জাদ ভূইয়া নামের আরও দুইজন বিষয়টির সঙ্গে জড়িত বলে জানা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বায়োকেমেস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক পলাশ বলেন, ‘বাসে যে হারে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, তাতে প্রতি বাসে গড়ে ১০,০০০ টাকা করে লাভ করলে ২০টি বাসে তার লাভ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ টাকার মতো। এটা আসলে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে এক ধরনের ব্যবসা।

শাবিপ্রবির কুমিল্লা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘কুমিল্লা ট্রান্সপোর্টের বাসগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো না। এই জন্য আমরাও খুব কম যাতায়াত করি এই বাসে। এই নিম্নমানের বাসগুলো ঠিকসময়ে সিলেট থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছে কিনা তা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, সিলেট বাইকিং কমিউনিটি, বুস্টারসসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছে। সেখানে শাকিল যা করছেন যা মোটেও ঠিক নয়। এ বিষয়টি আমাদের লজ্জায় ফেলছে।’

তবে এ বিষয়ে কথা বললে ব্যবসার বিষয়টি এড়িয়ে যান শাকিল। তিনি বলেন, ‘আমি মোটেও লাভ করছি না। পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আমি এ উদ্যোগ নিয়েছি।’ পরিবহন ব্যবসার বিষয়ে কারও কাছ থেকে কোনও অনুমতি নেননি বলেও স্বীকার করেন তিনি। তিনি আরও জানান, তার ভাড়া করা এসব বাস দুর্ঘটনার শিকার হলে এর দায়ভার তিনি নেবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ভর্তি কমিটির শৃঙ্খলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘শাকিল বা অন্য যারা ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য বাসের ব্যবসা শুরু করছে, তাদের কেউই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনও ধরনের অনুমতি নেয়নি। এ ধরনের কাজে আমি চরম সংক্ষুদ্ধ। এটা ন্যাক্কারজনক। আমি ওসিসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশ বলেছে, সার্বিক দিক বিবেচনায় বাস ভাড়া ৮০০ টাকার বেশি মানা যায় না। কারও কাছ থেকে যদি ৮০০ টাকার বেশি টাকা নেয় তাহলে সে যাতে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ফেরত দেয়। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পদক্ষেপ নেবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টিও আমরা ভাবছি।’

প্রক্টর জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ মূল ফটকসহ বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো ব্যবসা করে। তারা মূল ফটকে ক্যাম্পাসের বাইরে ব্যবসা করছে। তবে তারা কোনও অনুমতি নেয়নি। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা ছেলেমেয়েগুলোর কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিচ্ছে বলে আমার কাছে অনেক অভিযোগ এসেছে। আমরা পরীক্ষা শেষে তাদের ডেকে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পদক্ষেপ নেবো।’

এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘শিক্ষার্থী বাস ব্যবসার বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমদ স্যার। তবে শাকিল এ ধরনের কোনও অনুমতি আমাদের কাছ থেকে নেননি। অনেকেই যেখানে স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছে, সেখানে পরীক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে এ ধরনের ব্যবসা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর করা উচিত না। আমরা বিষয়টি দেখবো।’

সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.