Main Menu

বরগুনার ছয় যুক্তিতে মিন্নির জামিন

অনলাইন ডেস্ক:  বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে ছয়টি যুক্তিতে স্থায়ী জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাঁকে জামিন দেন।জামিন আদেশে আদালত যেসব যুক্তি দেন তাহলো-

এক. ‘এজাহারে মিন্নির নাম নেই।দুই. গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘ সময়ে স্থানীয় (বরগুনা) পুলিশ লাইন্সে আটক করে এবং গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া, স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়।তিন. আদালতে হাজির করে রিমান্ড শুনানির সময়ে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ না পাওয়া।চার. ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিপিবদ্ধ করার আগেই আসামির দোষ স্বীকার সম্পর্কিত জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য।

পাঁচ. তদন্ত শেষ পর্যায়ে থাকায় তদন্তে কোনো সমস্যা তৈরি করতে পারবে না।ছয়. ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ও ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী নারী ও শিশুর জন্য বিশেষ ব্যতিক্রম বিবেচনায় মিন্নির জামিন মঞ্জুর করলাম। আদালত আদেশে আরো বলেছেন, ‘এই সময়ে মিন্নি তাঁর বাবার জিম্মায় থাকবেন এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।

গতকাল বুধবার আলোচিত এই মামলাটির শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজকে দিন নির্ধারিত ছিল। মিন্নির পক্ষে জামিন শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এম আমিন উদ্দিন ও মনসুর হক চৌধুরী। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন।

রায় শেষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না আদালত চত্বরে গণমাধ্যমের কাছে এ ব্যাপারে ব্রিফ করেন। তখন তিনি জানান, এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার আগেই মিন্নিকে নিয়ে পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারেও আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। তাতে আদালত বলেছেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা আইনসম্মত নয়। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্রিফিং নিয়ে নীতিমালা তৈরির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া বরগুনার পুলিশ সুপারকে মামলার তদন্ত চলার সময়ে মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন মর্মে মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দেওয়ায় এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।গত ৮ আগস্ট আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন ফেরত দেন বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওই দিন হাইকোর্ট বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিন দেননি। জামিন আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল দিতে চাইলে মিন্নির আইনজীবীরা তাতে সম্মত হননি। পরে আদালত জামিন আবেদন ফেরত দেন।

পাশাপাশি মামলাটি তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় মিন্নির বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ায় পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বিভাগীর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।গত ২০ আগস্ট হাইকোর্টের এই বেঞ্চ আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে এক সপ্তাহের রুল জারি করেছিলেন। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ২৮ আগস্ট কেস ডকেট নিয়ে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

এর আগে গত ৫ আগস্ট মিন্নির জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গত ৩০ জুলাই মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।২২ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। ওই দিনই শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

পরদিন ২৩ জুলাই ‘মিস কেস’ দাখিল করে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালতে ফের জামিনের আবেদন করেন মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের নথি তলব করে ৩০ জুলাই জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন।

গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় মিন্নি হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। খুনিরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়।

সেদিন তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে উভয় পক্ষের শুনানি চলতে থাকে। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির আদালতে উপস্থিত হলে এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। সবার উপস্থিতিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ল্যাপটপে হত্যাকাণ্ডের আগের ও পরের ভিডিও ফুটেজ দেখান। এ ছাড়া মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিসহ হত্যার আগে ও পরে প্রধান আসামি নয়ন বন্ডসহ অন্যান্য আসামির সঙ্গে মিন্নির কললিস্টের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। শুনানি শেষে মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ পরের দিন সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। মিন্নি ছিলেন সেই মামলার এক নম্বর সাক্ষী। পরে ১৬ জুলাই রাতে এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরদিন বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.