Main Menu

৯ বছরের শিশুর পড়া পানি খেয়ে নিঃসন্তানরা অন্তঃসত্ত্বা

নওগাঁয় নয় বছরের এক শিশু কবিরাজি পানি পড়া চিকিৎসা দিচ্ছে। আর এ পানি পড়া খেয়ে নিঃসন্তান দম্পতিরা অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন। এমন গুজব সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে একটি সন্তান জন্মদানের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে শত শত দম্পতিরা ছুটে আসছেন। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছেন পানি পড়া নেয়ার জন্য। আর এমন ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটী ইউনিয়নের সরিষপুর গ্রামের হাজী পাড়ায়। কবিরাজের নাম দিপু। বাবার নাম জানা যায়নি। তবে মায়ের নাম দেলেয়ারা বেগম। আর এ পানি পড়াকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমান দোকান।

নওগাঁ শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার পশ্চিমে সরিষপুর গ্রাম। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে গ্রামে প্রবেশ পথে রাস্তার দু’ধারে মাইক্রোবাস, অটোচার্জার ও ভ্যান সারি সারি করে রাখা আছে। রাস্তা থেকে দিপু কবিরাজের বাড়ি প্রায় এক কিলোমিটার দুরে। রাস্তা থেকে কবিরাজো বাড়ি পর্যন্ত মানুষ লাইন ধরে আসা যাওয়া করেছেন। হাজী পাড়ায় গিয়ে দেখা যায় একটি আম বাগানের মধ্যে টিনের বেড়া দিয়ে তৈরী একটি ঘর ও বারান্দা। আর এ বারান্দায় বসে পানি পড়া দিচ্ছে শিশু কবিরাজ দিপু। কবিরাজের সামনে একটি দান বাক্স মসজিদের জন্য এবং ঘরের বাহিরে আরেকটি দানবাক্স মন্দিরের জন্য রাখা আছে। যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা বাক্সে নিজেদের ইচ্ছেমত দান করছেন।
জানা গেছে, দুই সন্তান নিয়ে অন্যের জমিতে টিনের বেড়া করে ঘর দিয়ে আছেন দেলেয়ারা বেগম। স্বামী তাদের ছেড়ে অনেক আগে চলে গেছেন। বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন আর কাজ করতে হয়না। গ্রামের সমসের আলী হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে কবিরাজ দিপু। তবে কুরআন পড়া এখনো শুরু হয়নি। দিপুর বয়স ৯ বছর হলেও ৬ বছর বয়স থেকে পানি পড়া দিয়ে আসছে। প্রতিবেশী জহুরুল ইসলামের বউয়ের দীর্ঘদিন থেকে কোন বাচ্চা হয়নি। তিন বছর আগে তার বউকে পানি পড়া দেয়া হলে গর্ভধারন করে এবং বাচ্চাটি নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে আবারও একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়। গত তিন দিন বছর থেকে এ কবিরাজি চিকিৎসা দিয়ে আসছে। তখন তেমন ভীড় ছিলনা। এ বিষয়ে তেমন কোন প্রচার-প্রচারনা করা হয়নি। যাদের বাচ্চা হয়েছে এবং উপকৃত হয়েছেন তারাই মূলত এ প্রচার প্রচারনা করেছেন। 
তবে গত তিনমাস থেকে কবিরাজ দিপুর কাছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া ও জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত নারী-পুরুষ আসছেন পানি পড়া নিতে। পড়া পানি একজন নারী দিনে দুবার খেতে হয় এবং একজন পুরুষ পড়া মধু দিনে দুবার খেতে হয়। এছাড়া পড়া তেল একজন পুরুষ দিন দুবার শরীরে মাখতে হয়। একজন নারীকে ৩/৫ সপ্তাহ চিকিৎসা নিতে হয়। এরমধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়। অন্তঃসত্ত্বা হলে ডাক্তার দিয়ে কোন চিকিৎসা বা আল্ট্রাসোনো করানো যাবেনা বলেও নিষেধ করা হয়। প্রতি শুক্রবার করে পানি পড়া দেয়া হয়ে থাকে। কবিরাজি চিকিৎসা নিতে খরচ হয় তাবিজ ১৩০ টাকা এবং কবিরাজি ফি ১০ টাকা। যাদের মনোবাসনা পূরন হয় তারা কবিরাজের বাড়িতে এসে খাসি জবাই করে উপস্থিত সবার মাঝে বিতরণ করেন। গত শুক্রবার ২৮ টি খাসি জবাই করা হয়েছে বলেও জানা যায়।
নওগাঁ সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের গত ২৩ বছরে তাদের দাম্পত্য জীবনে কোন সন্তান নাই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কবিরাজের বাড়িতে এসে স্ত্রী শাহিদা বেগম লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন ডাক্তার ও কবিরাজের কাছে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চিকিৎসা নিয়েও কোন কাজ হয়নি। কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সংবাদ পেয়ে এখানে এসেছি পানি পড়া নিতে।
কবিরাজ দিপুর মা দেলেয়ারা বেগম বলেন, দিপু যখন পেটে তখন থেকেই অনেক কিছু উপলদ্ধি করতাম। জন্মের আড়াই মাস বয়সে এক রাতে বাচ্চা সাপের রুপ ধারন করে। এরপর অনেক ডাক্তার ও কবিরাজ দেখানো হয়। কবিরাজ বাচ্চার গায়ে হাত দিলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আমাদের অসহায়ত্ব দেখেই নাকী বাচ্চার উপর জ্বীনের আছর পড়েছে। তখন কবিরাজরাই বলেন বাচ্চাটিকে আমাদের কিছুই করার নাই। যখন বাচ্চা শরীরে জ্বীনের ভর করে তখন কোন নিঃসন্তান দম্পতি থাকলে তাকে বাচ্চা জন্ম ধারনের ক্ষমতা দেয়া হবে বলেও জানানো হয়। এছাড়া কেউ যদি কাউকে কুফরি করে সেটাও ভাল করা যাবে। এরপর ৬ বছর বয়স থেকে পানি পড়া দিয়ে আসছে। রোগী দেখতে দেখতে বাচ্চা যখন অস্বস্থি বোধ করে তখন বাহির থেকে ঘুরে এসে আবার দেখা শুরু করে। বৃহস্পতিবার রাতে ছেলের গায়ে যখন ভর করে (জ্বীন হাজির হয়) কুরআনের সবকিছু বলতে পারে।
নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা: মুমিনুল হক বলেন, মেডিকেল সাইন্সে বন্ধা কোন নারী পানি পড়া খেয়ে পেটে বাচ্চা আসে এরকম কোন নিয়ম নাই। এছাড়া সাইনটিফিক (বৈজ্ঞানিক) এরকম কোন বিধানও নেই। যেখানে পানি, মধু পড়া এবং তেল পড়া ব্যবহার করলে পেটে বাচ্চা আসে। যদি এরকম কোন ঘটনা হয়ে থাকে আমরা সরজমিনে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.