Home » মহান মে দিবস আজ

মহান মে দিবস আজ

মহান মে দিবস আজ। মাঠে-ঘাটে, কলকারখানায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টির দিন। দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এদিন বুকের রক্ত ঝরিয়েছিলেন শ্রমিকরা। মহান মে দিবস ২০২৫-এর এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’।

১৮৮৬ সালের এদিন শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। সেই ডাকে শিকাগো শহরের তিন লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ বন্ধ রাখেন। শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভসমুদ্রে। এক লাখ ৮৫ হাজার নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে আরও বহু বিক্ষুব্ধ শ্রমিক লাল ঝাণ্ডা হাতে সমবেত হন সেখানে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে অন্তত ১০ শ্রমিক প্রাণ হারান।

হে মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ‘মে দিবস’ হিসাবে পালন করতে শুরু করে।

১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের মর্যাদা, শ্রমের মূল্য এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে শ্রমিকেরা যে আত্মাহূতি দিয়েছিলেন, তাদের সে আত্মত্যাগের সম্মানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে সব গণমাধ্যম বিভিন্ন লেখা প্রকাশ ও অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

মহান মে দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে জাতীয় ছুটির দিন। আরও অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়।

দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বিশ্বজুড়ে শ্রমিক শ্রেণির মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্কে এই দিবসের তাৎপর্য ও প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এর ফলে শ্রমিকদের দৈনিক কাজের সময় নেমে আসে আট ঘণ্টায়।

দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে মে দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বছর মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’ আমাদের দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রমিক ও মালিক পরস্পরের পরিপূরক, আর তাদের যৌথ প্রচেষ্টাই একটি শক্তিশালী, আত্মনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাত, কৃষি, শিল্প, নির্মাণ, পরিবহন, প্রযুক্তি—প্রতিটি খাতের উন্নতির পেছনে রয়েছে শ্রমিক এবং মালিকের মেধা ও প্রাণান্তকর পরিশ্রম। এ দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং আস্থার পরিবেশ সুদৃঢ় করতে হবে। আমরা যদি ঐক্য ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখি, তাহলে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তব হয়ে উঠবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম শাখার এক স্মারকে শ্রমিককে চাকরিচ্যুতি, ছাঁটাই এবং মহান মে দিবসে কারখানা বন্ধ রাখার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘যৌক্তিক কারণ এবং শ্রম আইনের প্রতিপালন ব্যতীত শ্রমিক চাকরিচ্যুত বা ছাঁটাই করা যাবে না। এক্ষেত্রে শ্রমিক চাকরিচ্যুত বা ছাঁটাই করার আগে স্থানীয় প্রশাসন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর, শিল্পাঞ্চল পুলিশ এবং বিজিএমইএ’র ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। শ্রম আইন মেনে শ্রমিককে চাকরিচ্যুত বা ছাঁটাই করা না হলে, মালিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আরএমজি বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (আরএমজি বিষয়ক টিসিসি)-এর ২০তম সভার এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তগুলো প্রতিপালন ও বাস্তবায়ন করার জন্য নির্দেশক্রমে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়।

সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে আরও আছে—মহান মে দিবসে সব কারখানা বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। কোনও কারখানা কর্তৃপক্ষ মে দিবসে কারখানা খোলা রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মে দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে মে দিবসের এই মূল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

মে দিবস উপলক্ষে সকালে সরকারি উদ্যোগে র‍্যালি অনুষ্ঠিত হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত-নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে এবারের মহান মে দিবসের অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে।

এছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় বিশেষ বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান, বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রচার করা হবে।

মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হবে।

মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস, ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত, প্রচারিত, প্রদর্শিত মানসম্মত সংবাদ, স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক, রিপোর্টার, চিত্রগ্রাহক নির্বাচনপূর্বক অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।

মহান মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’ এসএমএস সব মোবাইল ফোন গ্রাহকের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *