Main Menu

জাফলংয়ে শতকোটি টাকার পাথর লুট, বিএনপির দুই নেতাসহ আসামি ১১৪

গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে শতকোটি টাকার পাথর লুটের ঘটনায় দু’টি মামলা হয়েছে।দুই মামলায় বিএনপি সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক (পদ হারানো) রফিকুল ইসলাম শাহপরান ও জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপনসহ ১১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় এবং বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে সিলেটের পরিবেশ আদালতে এ দু’টি মামলা দায়ের করেন। গোয়াইনঘাট থানায় দেয়া এজাহারে ৯২ জন ও আদালতে দায়ের করা মামলায় ২২জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

থানায় দায়ের হওয়া মামলায় শাহপরাণ ও শাহ্ আলম স্বপন ছাড়াও অন্য অভিযুক্তরা হলেন উপজেলার জাফলং চা বাগানের কৈকান্দিরপাড় এলাকার সিদ্দিক শিকদারের ছেলে সুমন শিকদার (৪৩), আকবর শিকদারের ছেলে পারভেজ শিকদার (৩৯), আব্দুল মজিদের ছেলে রুবেল মিয়া (৩৭), নয়াবস্তির ইনছান আলীর ছেলে আলিম উদ্দিন (৪২), মোহাম্মদপুরের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে সিরাজ মিয়া (৫৫), নলজুরীর আব্দুস সালার ছেলে সুহেল আহমেদ (৩৮), জাফলংয়ের আজিম উদ্দিন, একই এলাকার হুসেন আহমেদ, বাউরবাগ হাওর এলাকার মো. মনু মিয়ার ছেলে আব্দুল মান্নান, জাফলংয়ের মাসুদ মিয়ার ছেলে আব্দুস শহীদ, একই এলাকার মামুন, জালাল পীরের ছেলে জামাল, হাসেম খন্দকারের ছেলে শরীফ, মুসলিম আলীর ছেলে আইনুল, রুস্তম আলীর ছেলে ইমান আলী, একই এলাকার শাহাদাৎ, আফসর, ফারুক, লোকমান, বিলাল, নয়াগাঙ্গের পাড় এলাকার হাসান খাঁর ছেলে মো. জলিল মিয়া, জাফলংয়ের সিরাজ মিয়ার ছেলে নাসির হসেন, ধলু মেম্বারের ছেলে সাদ্দাম, খালিক খন্দকারের ছেলে আব্দুল মান্নান, সৈয়দ আলীর চেরাগ মিয়া, আব্দুল মজিদের ছেলে আজগর, আব্দুল কাদির, মোতালেব শেখ, মস্তকিন আলীর ছেলে ময়নুল, শিমুল, তাহির আলীর ছেলে শফিক, ছিদ্দিক মিয়ার ছেলে রানা মিয়া, শফিক মিয়ার ছেলে চান মিয়া ওরফে চান বাদশা, হুসেন মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া, ছিদ্দিক মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া, সেলিম মিয়ার ছেলে শাকিল মিয়া, বারিক মিয়া, কনু মিয়ার ছেলে আব্দুল জলিল, মাখই মিয়ার ছেলে আব্দুর রউফ ও আবুল কাসেম, ইমান আলীর ছেলে হবি মিয়া, আব্দুল হামিদের ছেলে সাইদুল, মৃত মন্তাজ আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান লিলু, মৃত মুছব্বীর আলীর ছেলে হেলুয়ার আহমেদ, মোক্তার আলীর ছেলে মো. মোতালিব মিয়া, হাজী মো. আনফর আলীর ছেলে মো. বুহল আমিন, মো. সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মো. নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর-২, ছৈলাখেল ৮ম খন্ড’র মৃত মঙ্গল মিয়ার ছেলে মো. হারুন মিয়া, জাফলংয়ের ছেলে মৃত মছব্বীর আলীর ছেলে মিজবা উদ্দিন, ছৈলাখেল ৮ম খন্ড’র আহমদ আলীর ছেলে আবুল কালাম, মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে মো. আবু হানিফ, জাফলং বস্তির ফুরকান আলীর ছেলে হেলাল উদ্দিন, হাজী মছব্বির আলীর ছেলে মো. তাজ উদ্দিন তালুকদার, নয়াগাঙ্গের পাড়ের হাসান খাঁর ছেলে মো. জলিল মিয়া-১, জাফলংয়ের মৃত মকন মিয়ার ছেলে গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, মো. মবশ্বির আলীর মো. তারেক রহমান, মো. মস্তাকিন আলীর ছেলে মো. জয়নাল আবেদিন, মৃত মাহমুদ আলীর ছেলে মো. আবুল কালাম কাসেম, ছৈলাখেল ৮ম খন্ড’র মো. সিদ্দিক মিয়ার ছেলে মো. রানা মিয়া, মৃত মঙ্গল মিয়ার ছেলে মো. শাহজালাল, মৃত মাজু মিয়ার ছেলে মো. সেলিম মিয়া, মো. কুনু মিয়ার ছেলে মরম আলী সরকার-১, নয়াগাঙ্গের পাড় এলাকার মো. আব্দুল ছালামের ছেলে মো. আবুল মিয়া, জাফলংয়ের মৃত তাহের আলীর ছেলে মোজাম্মেল আলী, মোবাশ্বির আলীর ছেলে রাজু আহমদ, ছৈলাখেল ৮ম খন্ড’র মৃত আবদুল খালেকের ছেলে কবির মিয়া, জাফলংয়ের মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে মো. আতিকুর রহমান চেরাগ, সিরাজ মিয়ার ছেলে ফাহিম আহমদ, ছৈলাখেল ৮ম খন্ড’র মো. মুসলিম মিয়ার ছেলে মো. আ. কুদ্দুছ মিয়া, জাফলংয়ের মৃত মনির আলীর ছেলে মো. এরশাদ আলী, ছৈলাখেল ৮ম খন্ড’র মো. মাজু মিয়ার ছেলে মো.আ. রব মিয়া, জাফলংয়ের ফুরকার আলীর ছেলে মো. সিরাজ মিয়া, মৃত কুরবান আলীর ছেলে কামাল উদ্দিন-২, ছৈলাখেল ৮ম খন্ড’র মো. সানু মিয়ার ছেলে মরম আলী-২, জাফলংয়ের মো. সিরাজ উদ্দিনের ছেলে শাহজানান মিয়া, মো. ফরিদ আহমেদের ছেলে মো. আক্তার হোসেন, মৃত মাহমুদ আলীর ছেলে মো. আব্দুর রউফ, নয়াবস্তির মৃত আতর আলীর ছেলে মরম আলী-৩, ছৈলাখেল ৮ম খন্ড’র আলী হায়দারের ছেলে সুহেল রানা, কেকান্দির পাড়ের মো. মোস্তফার ছেলে সফিকুল ইসলাম, নয়াবস্তির সফিকুল ইসলামের ছেলে মো. ইউনুছ মিয়া, আসামপাড়ার আজগর আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম, মামার দোকানের মো. হানিফ আলীর ছেলে মহির উদ্দিন, বাউরবাগের মো. মনির উদ্দিনের ছেলে মো. হান্নান, জাফলংয়ের মো. জালাল মিয়ার ছেলে মো. জাহাঙ্গীর-১, ছৈলাখেল ৮ম খন্ড’র মুনসুর আলীর ছেলে দুদু মেম্বার, বাউরবাগ হাওরের আলা উদ্দিনের ছেলে শাহজাহান মিয়া।

গোয়াইনঘাট থানায় দেয়া এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ও মোতাবেক সরকার ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি তারিখে জাফলং- ডাউকি নদী ও নদীর উভয় পার্শ্বে ৫০০ মিটার এলাকাসহ মোট ১৪.৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (Ecologically Critical Area-ECA) ঘোষণাপূর্বক সুনির্দিষ্ট কর্মকান্ডকে নিষিদ্ধ করা হয়।জাফলং-ডাউকি নদীর ইসিএভূক্ত এলাকায় ১৪ অক্টোবর ভোর ৬টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে যৌথভাবে অভিযান চালায় টাস্কফোর্স।এসময় ইসিএভূক্ত এলাকায় বেআইনীভাবে নিষিদ্ধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে নদীর তলদেশ ও পাড় থেকে উত্তোলিত বালু ও পাথর সংগ্রহপূর্বক জাফলং ব্রিজের উত্তর পাড়ে বিক্রির জন্য স্তুপাকারে রাখা ৫২টি স্তুপে ৬৬ হাজার ১৫০ ঘনফুট বালু ও ৬ হাজার ৯৯৫ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। জব্দকৃত বালু ও পাথরের বাজার মূল্য ১৮ লাখ ৩১ হাজার ৬৫০ টাকা।পরে জন্দতালিকামূলে জব্দ করে টাস্কফোর্স’র প্রধান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনায় পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. ফখরুল ইসলামের জিম্মায় প্রদান করা হয়।
স্থানীয় ৪ জন ব্যবসায়ী সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয়দের সাথে আলোচনায় জানা যায়, আসামীরা দীর্ঘদিন থেকে উক্ত এলাকার শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে ইসিএভুক্ত এলাকা থেকে বেআইনীভাবে উত্তোলিত বালু-পাথর ক্রয় করে জাফলং সেতুর উত্তর পাশে নদীর তীরে স্তুপাকারে রেখে অন্যত্র বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।পাশাপাশি ইসিএভুক্ত জাফলং-ডাউকি নদী হতে অবৈধভাবে বালু- পাথর সাধারণ শ্রমিকদের মাধ্যমে উত্তোলনে প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিয়ে যাচ্ছেন। ইসিএভুক্ত এলাকায় এরকম নিষিদ্ধ কর্মকান্ড পরিচালনার ফলে জাফলং-ডাউকি নদীর ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট নষ্ট/পরিবর্তন এবং প্রতিবেশ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধিত হচ্ছে, যা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত, ২০১০) এর ধারা ৫ পরিপন্থী এবং একই আইনের ১৫(১) টেবিলের ক্রমিক নং ২ অনুসারে দন্ডনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বলেন, গণমাধমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের আলোকে লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে মামলা করা হয়েছে।

জানা যায়, উপজেলা প্রশাসনের সর্বশেষ ২৬ জুলাইয়ের পরিমাপ অনুযায়ী জাফলংয়ে পাথর মজুদ ছিল তিন কোটি ৭৪ লাখ ঘনফুট। ৫ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে লুটপাটে প্রায় এক কোটি ঘনফুট পাথর চুরি করা হয় ।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের পাদদেশে বাংলাদেশের ডাউকি-পিয়ান নদের মিলনস্থলে জাফলংয়ের অবস্থান। বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ব্যাপক পরিচিতির পাশাপাশি বালু-পাথর সম্পদেরও আধার জাফলং। বালু-পাথর আহরণে পারিবেশের ক্ষতি হওয়ায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে জাফলংকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়েছিল। বালু-পাথর উত্তোলনে ইজারা বাতিল করায় ডাউকি-পিয়ান নদের মোহনায় কয়েক স্তরে হাজার হাজার ঘনফুট পাথর জমেছিল ।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.