Main Menu

যুক্তরাজ্যে কেয়ার ভিসা, বাংলাদেশিদের যা জানা জরুরি

যুক্তরাজ্যে কেয়ার হোম খাতে কর্মী সংকটের ফলে আইনি শিথিলতার সুযোগে বাংলাদেশসহ বি‌ভিন্ন দেশ থে‌কে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী দেশটিতে যাচ্ছেন। তবে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া, শিক্ষা-কাজের অভিজ্ঞতা, বিমানবন্দ‌রে নানান প্রশ্নের উত্তর বা বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে অসঙ্গতি থাকার কারণে অনেককেই দে‌শে ফেরত আসতে হয়। অনেকে আবার গন্তব্যে পৌঁছেও কাজের সন্ধানে গিয়ে নানা বাধার সম্মুখিন হন। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কিভাবে কেয়ার ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়ে সুযোগ কাজে লাগানো যাবে, এ নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন লন্ডন থেকে ব্যারিস্টার সলিসিটর মুহাম্মদ সাঈদ বাকি।

কেয়ার ওয়ার্কারদের জন্য কী ধরনের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন?
ব্যারিস্টার সাঈদ বাকি: কেয়ার ভিসায় আসতে হলে একজন মানুষের প্রথমত সংশ্লিষ্ট পেশায় কাজের অভিজ্ঞতা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। কেয়ার ভিসা হলো ইউরোপের দেশটিতে যেসব বয়স্ক মানুষ রয়েছে তাদের সেবা করা। সেটা হতে পারে কেয়ার হোমে বা বাসায় গিয়ে। কাজগুলো হলো- তাদের যত্ন করা, ঔষধ খাওয়ানো, তাদের দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করা। যাদের এ সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে তারাই কেয়ার ভিসায় অ্যাপ্লিকেশন করতে পারবেন।


এ ভিসার জন্য কেমন যোগ্যতা আর কী কী ডকুমেন্ট প্রয়োজন?

ব্যারিস্টার সাঈদ বাকি: বর্তমান আইন অনুয়ায়ী যুক্তরাজ্যে কেউ যদি কেয়ার ভিসায় আসতে চান তাহলে তাকে সর্বপ্রথম যে জিনিসটা প্রমাণ করতে হয় সেটা হলো ভাষাগত দক্ষতা। অর্থাৎ তাকে আইএলটিএসে কম পক্ষে ৪.৫ পেতে হবে। আইএলটিএসের পাশাপাশি তার যে শিক্ষাগত যোগ্যতা সংশ্লিষ্ট পেশায় এবং কাজের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে সেটারও প্রমাণ রাখতে হবে। উনি যদি কোনো নার্সিং হোমে কাজ করে থাকেন, কেয়ার হোমে অথবা কোনো হাসপাতালে কাজ করে থাকেন সেই সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র দিলে অনেক সময় এটা হোম অফিস অথবা তার যে স্পন্সর বা নিয়োগ কর্তা সেটা ইতিবাচকভাবে দেখে।

কেয়ার ভিসায় ইমিগ্রেশনে কী কী প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে নতুনরা?
ব্যারিস্টার সাঈদ বাকি: কেয়ার ভিসায় যুক্তরাজ্যে গেলে সেখানকার ইমিগ্রেশন নানান ধরনের প্রশ্ন করতে পারে। এ প্রশ্নগুলো করা হয়ে থাকে যিনি আসছেন তিনি কি সত্যিকারের এমপ্লয়ি কিনা, উনি সঠিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন কিনা। এটা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন প্রশ্ন করতে পারে। সাধারণ তারা প্রশ্ন করে থাকে তিনি যে কাজে আসছেন তার কাজ সম্পর্কে ধারণা আছে কিনা, তার কাজ কবে থেকে শুরু হবে এবং তিনি যে জবটা পেয়েছেন সেটা কিভাবে পেলেন, তার সাক্ষাৎকার করা হয়েছে কিনা, সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতা আছে কিনা। নানাভাবে তারা প্রশ্ন করতে পারেন। এবং এ প্রশ্নের মাধ্যমে তারা যাচাই বাচাই করে যিনি আসছেন তিনি কেয়ার ভিসায় কাজ করার জন্য যোগ্য কি না।

এ ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়ে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন বা পাচ্ছেন না, তাদের করণীয় কী?
ব্যারিস্টার সাঈদ বাকি: এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, এ দেশে আসার আগে একটু সতর্কতা অবলম্বন করা। চাকরি পাওয়ার আগে উনি কী কী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। যে কোম্পানিতে চাকরি করবেন সেটা চেক করেছেন কিনা। কোম্পানি যে কেয়ার ওয়ার্কার নিচ্ছে সেটা তিনি কিভাবে জানলেন? কোম্পানি তার কোনো ইন্টারভিউ নিয়েছে কিনা। উনি কী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসছেন এটা অনেকটা নির্ভর করে।

যুক্তরাজ্যে আসার পর দেখা যায় অনেক কোম্পানির লাইসেন্স চলে গিয়েছে, অথবা তারা কাজ দিচ্ছে না তাদের জন্য করণীয় হচ্ছে- তাদের অন্য কোনো কোম্পানীতে অ্যাপ্লিকেশন করা। অর্থাৎ যুক্তরাজ্যে বর্তমানে প্রচলিত যে আইন রয়েছে, সে আইন অনুযায়ী একজন মানুষের যদি ভিসা বাতিল করা হয় বা কোনো কেয়ার কোম্পানির লাইসেন্স যদি বাতিল করে দেয় সরকার, এতে করে তার যে কর্মচারী রয়েছে তারও কিন্তু ভিসা বাতিল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে হোম অফিসের নিয়ম অনুযায়ী তাকে ৬০ দিনের সময় দেয়া হয় অন্য কোনো কোম্পানিতে অ্যাপ্লিকেশন করার জন্য অথবা অন্য কোনো ভিসাতে আবেদন করার জন্য। এ সময়ের মধ্যে তারা যদি সেটা না করতে পারে তাহলে তাদের বলে দেয়া হয় নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার জন্য।

ভিসা আবেদনের আগে কী কী বিষয় জানা জরুরি?
ব্যারিস্টার সাঈদ বাকি: কোনো এমপ্লয়ার কোনো এমপ্লয়ির কাছ থেকে অর্থাৎ যিনি আসবেন তার কাছ থেকে কোনো অর্থ দাবি করতে পারবেন না।যদি কেউ কাজ দেয়ার নাম করে অর্থ দাবি করে তাহলে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, কেয়ার ভিসার কাজ দেয়ার নাম করে ওয়ার্ক পার্মিট বেচা কিনা করা যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ। সরকার এই দেশে কেয়ার হোম গুলোকে লাইসেন্স দিয়েছে বিদেশ থেকে দক্ষ কেয়ার ওয়ার্কার আনার জন্য। অর্থাৎ যারাই যোগ্য বা এসব কেয়ার হোমে কাজ করার জন্য অভিজ্ঞতা রয়েছে শুধুমাত্র সরকার তাদের আনার জন্য অনুমতি দিয়েছে।

এ ভিসায় বাংলাদেশ থেকে কারা যেতে পারবেন?
ব্যারিস্টার সাঈদ বাকি: বাংলাদেশ থেকে ছেলে-মেয়ে উভয়ের কেয়ার ভিসায় যুক্তরাজ্যে যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যে বেসিক রুল রয়েছে তা হলো আইএলটিএসে ৪.৫ পাওয়া। এবং সংশ্লিষ্ট পেশার অর্থাৎ কেয়ার ইন্ড্রাস্ট্রিতে কাজের যোগ্যতা থাকা। সেক্ষেত্রে অনেকে অনলাইন কোর্স করেন, হাসপাতালে কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট জমা দেন, নার্সিং হোমের কাজের অভিজ্ঞতা জমা দেন। এ ক্ষেত্রে তার জব পাওয়ার জন্য সহায়ক হয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে ১৮ বছরের উপর ছেলে-মেয়ে কারই এদেশে আসতে বাঁধা নেই।

স্থায়ী বসবাসের জন্য কী প্রয়োজন?

ব্যারিস্টার সাঈদ বাকি: কেয়ার ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়ে কেউ যদি ৫ বছর এ ভিসায় কাজ করে থাকেন, ভিসা ভ্যালিড থাকে, টানা পাঁচ বছর কাজের পর স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্যে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। স্থায়ী ভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়ার ১ বছর পর এক বছর পরে সাধারণত বৃটিশ সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করা যায়, যদি না তার অন্য কোনো অসুবিধা থাকে। এ ক্ষেত্রে একজন প্রার্থী সেটেলম্যান পাওয়ার ১২ মাস পর বৃটিশ সিটিজেনশিপের আবেদন করবে পারবেন।


কেয়ার ভিসায় ডিপেন্ডেন্ট নেয়া যাবে কি না?

ব্যারিস্টার সাঈদ বাকি: সম্প্রতি কেয়ার ভিসায় যে নিয়ম রয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার সেটাতে বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসছে। বর্তমানে যিনি কেয়ার ভিসায় আসতে যাচ্ছেন তারা কিন্তু তাদের ডিপেন্ডেন্ট নিয়ে আসতে পারবেন। কিন্তু আগামী ১১ মার্চ থেকে যে নিয়ম আসছে সেখানে নতুন করে যারা কেয়ার ভিসায় আসবেন তারা আর ডিপেন্ডেন্ট নিয়ে আসতে পারবেন না। কিন্তু যারা বর্তমানে যুক্তরাজ্যে এ ভিসায় অবস্থান করছেন তারা তাদের ডিপেন্ডেন্ট নিয়ে আসতে পারবেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য সরকার কেয়ার ভিসাকে শর্টেজ অকেপেশন লিস্টের আওতাভুক্ত করে। এ ক্ষেত্রে তারা ঘোষণা করে যে, কেয়ার ভিসায় আসতে হলে তাদেরকে আইএইচএস ফি অর্থাৎ হেলথ চার্চ ফি প্রতি বছর দিতে হয়, সেটা দিতে হবে না। এতে করে উল্লেখ্যযোগ্য মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অ্যাপ্লিকেশন করেছে এবং দেশটিতে যাচ্ছে। তবে সেই সুযোগে হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী বৈধভাবে পুরো পরিবার নিয়ে দেশটিতে আসা শুরু করে। পুরো বিষয়টি নজরে আসার পর চূড়ান্ত হার্ডলাইনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১১ মার্চ থেকে কেয়ার ভিসায় পরিবারের সদস্যদের নেয়া যাবে না ব্রিটেনে।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.