Main Menu

নাম্বারের আগে প্লাস চিহ্ন দেখালে কল ধরবেন না

অন্তত পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশের গ্রাহকদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড) গোপন তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছিল সংঘব’দ্ধ একটি প্র’তারকচ’ক্র। সম্প্রতি এমন কিছু অভি’যোগের তদ’ন্তে নেমে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রে’প্তা’রে রাজধানী ও ফরিদপুরের ভা’ঙ্গা থানা এলাকায় অভি’যান চালান র‌্যাব-২ ও র‌্যাব-৮-এর সদস্যরা। অভি’যানে গত ২৪ ঘণ্টায় সংঘব’দ্ধ প্র’তারকচ’ক্রটির ১৩ সদস্যকে গ্রে’প্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।

গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গ্রে’প্তাররা সং’ঘব’দ্ধ প্র’তারকচ’ক্রের সদস্য। এরা বিশেষ কৌ’শলে প্র’তারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। প্র’তারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সময় এদের কলের ক্ষেত্রে সাধারণত নাম্বারের আগে ‘প্লাস চিহ্ন’ থাকে। ওই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশজুড়ে এমন চার-পাঁচটি গ্রুপ সক্রিয় আছে। চ’ক্রের এসব সদস্যের বেশির ভাগ বয়সে তরুণ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নাজমুল জমাদ্দার (১৯), হাসান মীর (১৮), ইব্রাহিম মীর (১৮), তৌহিদ হাওলাদার (২৩), মোহন শিকদার (৩০), পারভেজ মীর (১৮), সোহেল মোল্যা (২৬), দেলোয়ার হোসেন (৩৫), সৈয়দ হাওলাদার (২০), রাকিব হোসেন (২৪), মোহাম্মদ আলী মিয়া (২৬), পলাশ তালুকদার (৩৪) ও ইমন (২৫)।

গ্রে’প্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৪৬২ টাকা, ৩১টি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, দুটি ট্যাব, ১২০টি সিম, একটি রাউটার এবং একটি টিভি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। আট’ক ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন মাস্টারমাইন্ড। এর মধ্যে মোহন গত দুই মাসে প্রায় এক কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, করোনা প’রিস্থিতির কারণে মানুষের বাইরে যাওয়া এড়াতে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বেড়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে প্রতারকচক্র। বেশ কিছু অভি’যোগ পাওয়ার পর তদ’ন্ত চালিয়ে এই চক্রের ১৩ সদস্যকে আট’ক করা হয়। তারা প্রত্যেকে প্রাথমিকভাবে এই অপরা’ধে জড়িত থাকার কথা স্বী’কার করেছে। একজন মাস্টারমাইন্ডের নিয়ন্ত্রণে চক্রের ৩০-৩৫ জন সদস্য কাজ করে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সাধারণত পাঁচটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি সম্পন্ন করে চ’ক্রটি। প্রথমত, চ’ক্রের ‘হা’ন্টার টিমের’ সদস্যরা মাঠপর্যায়ে গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ করে। তারা বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা, মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের নাম্বার সংগ্রহ করে মাস্টারমাইন্ডদের সরবরাহ করে।

দ্বিতীয় ধাপে ‘স্পুফিং টিমের’ সদস্যরা কাস্টমার কেয়ার নাম্বার কিংবা ব্যাংক কর্মকর্তার নাম্বার ক্লোন করে। এর ফলে প্র’তারকরা যখন গ্রাহকদের টার্গেট করে ফোন দেয়, তখন হুবহু সংশ্লিষ্ট নাম্বারটি দেখতে পায়। এতে গ্রাহকরা সহজেই বিভ্রা’ন্ত হয়ে ফাঁ’দে পা দিচ্ছেন। প্রতিটি নাম্বার ‘স্পুফিং’ বা ক্লোন করতে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পায় টিমের সদস্যরা।

তৃতীয় ধাপের প্রধান কাজটি করে ‘কাস্টমার কেয়ার’ টিমের সদস্যরা। তারা ১৫-২০ জন একসঙ্গে একটি রুমে বসে কথাবার্তা বলে একটি সত্যিকার কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের আবহ তৈরি করে। গ্রাহককে ফোন দিয়ে আশপাশের শব্দের মাধ্যমে বিভ্রা’ন্ত করা হয়।

চ’ক্রের মাস্টারমাইন্ড নিজে দল পরিচালনা করে। তারা কাস্টমার কেয়ার কর্মকর্তা সেজে কৌশলে গ্রাহকের কাছ থেকে গোপন পাসওয়ার্ড কিংবা ভেরিফিকেশন কোডসহ বিভিন্ন তথ্য নিয়ে নেয়। সঙ্গে থাকা অন্য কেউ অ্যাপসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এ জন্য তারা নির্জন কোনো চর বা গাছপালা ঘেরা নিরাপদ জায়গা বেছে নেয়।

চতুর্থ ধাপে ‘টাকা উত্তোলন’ টিমের সদস্যরা গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ ট্রান্সফারের পরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা এজেন্টদের মাধ্যমে নগদ টাকা উঠিয়ে নেয়। যেসব ব্যালান্স উত্তোলন করা সম্ভব হয় না, সেসব দিয়ে বিভিন্ন কেনাকাটা করে নেয় তারা।

শেষ ধাপে ‘ওয়াচম্যান’ টিমের সদস্যরা স্থানীয়ভাবে ছোটখাটো দোকান চালানোর কাজে সম্পৃক্ত, যারা এলাকায় নতুন কোনো আগন্তুক কিংবা সন্দেহভাজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে দেখলে মাস্টারমাইন্ডকে খবর দেয়। তারা ঘণ্টাভিত্তিক বা চুক্তিভিত্তিক কাজ করে থাকে।

প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত এসব অর্থ দলের মাস্টারমাইন্ড নিজের জন্য ৫০ শতাংশ, সহযোগীদের জন্য ৩০ শতাংশ, হান্টার টিমকে ২০ শতাংশ এবং স্পুফিং টিমকে নম্বরপ্রতি এক-দেড় হাজার টাকা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া লটারি জেতার কথা বলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি।

সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘নাম্বার স্পুফিং বা ক্লোন করায় গ্রাহকরা হুবহু সংশ্লিষ্ট নাম্বার থেকে ফোন পাবেন। ফোন করে অ্যাকাউন্ট বাতিল, স্থগিত বা সিস্টেম আপগ্রেডের কথা বলে তথ্য, পিন বা ভেরিফিকেশন কোড জেনে নিয়ে অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নেয় চক্রটি। কিন্তু প্রতারকদের স্পুফিং নাম্বারের আগে সাধারণত ‘প্লাস চিহ্ন’ থাকে। গ্রাহকদের তথ্য হাতিয়ে নেওয়া এই চক্রের সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।’

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.