Main Menu

জামায়াতের সিরাজ আ’লীগ নেতাদেরও টাকা দিতেন

সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে বহিস্কৃত অধ্যক্ষ ও নুসরাত জাহান রাফির হত্যা মামলার প্রধান আসামি সিরাজ-উদ-দৌলা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করতেন। তিনি উপজেলা জামায়াতের শূরা সদস্য। তবে জামায়াত তাকে বহিস্কার করেছে এমন দাবি করলেও তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। এই মাদ্রাসাটি শুরু থেকেই ছিল জামায়াত নিয়ন্ত্রিত। অভিযুক্ত সিরাজের বিরুদ্ধে আগেও নাশকতা, মাদ্রাসার তহবিল তছরুপ, জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা করা, অনৈতিক কাজের অভিযোগ এবং একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগেও তিনি কারাগারে গেছেন। তারপরও তিনি এ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে বহাল ছিলেন। 

এমন অনেক অপরাধের পর তিনি কীভাবে এতদিন বহাল তবিয়তে ছিলেন- এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে নানা চমকপ্রদ তথ্য। দুই বছর আগে জামায়াত নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত মাল্টিপারপাস সমবায় সমিতির টাকা আত্মসাৎ নিয়ে সিরাজ-উদ-দৌলার সঙ্গে দলের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। পরে তিনি জামায়াত নিয়ন্ত্রিত সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ পদে টিকে থাকতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শরণাপন্ন হন। বিভিন্ন কৌশলে অর্থ ব্যয় করে সোনাগাজী আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েক নেতার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এর মধ্যে তিনি শিবির কর্মীদের দিয়ে মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের একটি কমিটি দাঁড় করান। তারা মাদ্রাসায় ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করে। জামায়াত নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসায় তার সহায়তায় ছাত্রলীগের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে শিবির। এরপর থেকে উপজেলা জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা তার ওপর প্রচণ্ড রকম ক্ষেপে ওঠেন। বিভিন্নভাবে তারা তাকে হেনস্তার চেষ্টা করলে তার পক্ষে দাঁড়ান পৌর কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুল হালিম মামুন। এক পর্যায়ে মাদ্রাসার গভর্নিং বডিতে স্থান হয় ওই কাউন্সিলরের। মাদ্রাসার একটি তিনতলা মার্কেট রয়েছে।

এই মার্কেট থেকেই মাসে ভাড়া আসে দুই লাখ টাকা। মাদ্রাসা থেকে আরও অনেক আয় তো আছেই। তাই আওয়ামী লীগের সহায়তা পেতে কষ্ট হয়নি এই অধ্যক্ষের। মাদ্রাসার লাভ দেন নেতাদের। তিনি টিকে গিয়ে ক্ষমতায়নেও হাত দেন। তাই প্রথমে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মামুনের সহায়তা নিলেও তাকে একসময় ছুঁড়ে ফেলে দেন। 

এ প্রসঙ্গে পৌর কাউন্সিলর আব্দুল হালিম মামুন বলেন, তিনি সিরাজ-উদ-দৌলার কোনো অপকর্মে সহায়তা করেননি। 

মাদ্রাসায় বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে তার কোনো সংশ্নিষ্টতা নেই। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করায় সে তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে।

মামুনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পর সিরাজ আরেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলমের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। মাকসুদ আবার মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সদস্য। সব মিলিয়ে টিকে যান অধ্যক্ষ।

রাফিকে শ্নীলতাহানির মামলায় কারাগারে গেলে ‘সিরাজ মুক্তি পরিষদের’ নামে একটি সংগঠন তার মুক্তির দাবিতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে মিছিল ও মানববন্ধন করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান, কাউন্সিলর মাকসুদ ও মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা হোছাইনের পৃষ্ঠপোষকতায় সিরাজের মুক্তির জন্য মিছিল, মানববন্ধনসহ সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

রাফির হত্যা মামলায় আসামি মাকসুদ পালিয়ে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। তার ব্যবহূত মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

২০১৭ সালে ১৬ অক্টোবর মাদ্রাসার প্রায় ৩৯ লাখ টাকার তহবিল আত্মসাতের অভিযোগে সিরাজের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিকে এনামুল করিম। এ বিষয়ে কাউন্সিলর মামুন বলেন, সিরাজের বিরুদ্ধে বিপুল টাকা আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তিনি পার পেয়ে যান।

এভাবে মাদ্রাসার আয়-উপার্জনের বড় একটি অংশ আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়ে নিজে টিকে থাকেন। প্রথমে তিনি পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকনের সঙ্গে দহরম-মহরম সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হন। কিন্তু গত দুই বছর আগে বিপত্তি বাধে। মাদ্রাসা মার্কেটে থাকা ইসলামী ব্যাংকের শাখা পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত রাকিব প্লাজায় স্থানান্তর করতে তৎপর হয়ে ওঠেন মেয়র। অধ্যক্ষ সিরাজ তাতে বাধা দিলে মেয়রের সঙ্গে তার সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। সে সময় মেয়র অনুগত ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা সিরাজ-উদ-দৌলার ওপর কয়েকবার চড়াও হয়। এমনকি ফেনী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আবুল কালাম আজাদ মাদ্রাসা থেকে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে নিয়ে যান এবং ২০১৪ সালের নাশকতা মামলা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় মাদ্রাসা মার্কেট থেকে ইসলামী ব্যাংকের শাখা রাকিব প্লাজায় স্থানান্তরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। পরে তা স্থানান্তর করা হয়।

মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, তার সঙ্গে সিরাজের কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল না। পৌরসভার মেয়র হিসেবে রুটিন কাজের অংশ হিসেবে মাদ্রাসার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। ব্যাংক স্থানান্তর নিয়ে তার সঙ্গে আমার কোনো মতবিরোধ হয়নি। মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ কখনও ছিল না। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি হয়েছে আমাদের দলের নেতা, তাই সিরাজের ওপর ক্ষুব্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। মাদ্রাসার অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন দাবি করে মেয়র জানান, রাফিকে শ্নীলতাহানির ঘটনার পর তিনি প্রথম থেকেই প্রতিবাদ করেছেন।

কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সিরাজ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। গত কিছুদিন আগে মাদ্রাসায় নতুন কমিটি গঠনের সময় হলে কমিটিতে প্রবেশের জন্য পৌর মেয়র বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন নতুন কমিটিতে সহসভাপতি হিসেবে স্থান পান। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হন মেয়র। তাই মাদ্রাসার আয় ও বাণিজ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এই সুযোগে অধ্যক্ষ তার অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করেন। চালিয়ে যান অনৈতিক কাজ।

এদিকে, বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে রুহুল আমিনের সহায়তায় রাফি শ্নীলতাহানি মামলা ধামাচাপা দিতে তৎপর ছিল একটি মহল। এসব বিষয়ে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে আমাকে প্রথমে বিদ্যোৎসাহী সদস্য ও পরে সহসভাপতি করা হয়েছে। সিরাজ-উদ-দৌলার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই। তার কোনো অপকর্মে সহযোগিতা করা তো দূরের কথা রাফিকে শ্নীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগের পর আমি তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। 

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.